| |
               

মূল পাতা ইসলাম অর্থনৈতিক সংকট বিমোচনে দানের গুরুত্ব এবং ইসলামের নির্দেশনা


অর্থনৈতিক সংকট বিমোচনে দানের গুরুত্ব এবং ইসলামের নির্দেশনা


আহসানুল ইসলাম রাকিব     21 November, 2022     12:06 PM    


করোনা মহাসংকটের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অধিকাংশ জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের মানুষের জন্য পরিস্থিতি নীরব কান্নায় রূপ নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিত্তবান শ্রেণীর মানুষদের উচিত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। কেননা রব্বে কারীম মুসলিম মিল্লাতের ধনীদের সম্পদে গরিবদের হক রেখেছেন। এটি গরিবের প্রতি ধনীর কৃপা প্রদর্শন নয়, বরং তাদের অধিকার।

এ প্রসঙ্গে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা আহমাদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন : ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা মুসলমান ধনী লোকদের ধন-সম্পদ থেজে এমন পরিমাণ ব্যয় করা ফরয করে দিয়েছেন, যা তাদের গরিব ও ফকিরদের প্রয়োজন পুরণে যথেষ্ট হবে। তাই, গরিব-দুঃখীরা যে ক্ষুধাকাতর কিংবা বস্ত্রহীন থেকে কষ্ট পায়, তার মূলে রয়েছে ধনী লোকদের পুজিবাদী আচরণ। এ ব্যাপারে সকল মুসলিমদের সতর্কতা অবলম্বন জরুরী । জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই শ্রেণির লোকদের খুব কঠিন হিসেব গ্রহণ করবেন এবং তাদেরকে অতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।’ (আত্তাবরানী)।

এই হাদীসের মাধ্যমে সুস্পষ্ট উপলব্ধি করা যায় যে, গরিব-দুঃখী লোকদের অভুক্ত ও বস্ত্রহীন হয়ে থাকার জন্যে ধনী লোকেরাই বহুলাংশে দায়ী। কারণ, ধনী লোকেরা যদি তাদের ধন সম্পদ হতে গরিব-দুঃখীদের নির্দিষ্ট প্রাপ্য অংশ দিয়ে দিত, তাহলে গরিব দুঃখীদের খাওয়া-পরার, অভাবের যাতনা এবং কোনরূপ কষ্টের ও বেদনার সম্মুখীনহতে হতো না। মুসলিম মিল্লাতের ধনী শ্রেণির লোকেরা এই বিশেষত্বটি যতবেশী উপলব্ধি করবে, ততই মঙ্গল।

ইসলাম কখনোই পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করে না। সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ অর্থনৈতিক অভিশাপ। সমাজতন্ত্র স্বাধীন মানুষকে পরাধীন, যান্ত্রিক ও ইতর বস্ত্ততে পরিণত করে। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থনীতি মানুষকে বল্গাহীন স্বাধীন, নিপীড়ক, স্বার্থপর ও স্বেচ্ছাচারী করে তুলে। আর ইসলামী অর্থনীতি এই দুই মেরুর অর্থ ব্যবস্থার মাঝে সমন্বয় সাধন করে সমৃদ্ধশালী, সার্বজনীন কল্যাণকামী সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে।

ইসলাম আল্লাহ- প্রদত্ত মানবকল্যাণের জীবনব্যবস্থা। এ জীবনব্যবস্থা মানুষকে অন্য মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হতে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলাম দানের অনুপ্রেরণাকে এতটুকু পর্যন্ত প্রসারিত করেছে যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদই আল্লাহর পথে বিলিয়ে দেয়ার প্রতি আল কুরআনে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামকে দান খয়রাত করতে বললে তারা রাসূল সা:-কে প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা কী পরিমাণ দান করব? মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে যে, কী পরিমাণ তারা দান করবে? আপনি বলে দিন, প্রয়োজনাতিরিক্ত সবকিছু’ (সূরা বাকারা)।

দান প্রকাশ্যেও করা যায়, গোপনেও করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো, তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭১)।

সম্পদ আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। এ নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় হবে আল্লাহর বান্দা তথা মানুষের সেবা করার মাধ্যমে। মানুষকে সহায়তা করতে অনেক ধনসম্পদের মালিক হতে হবে এমন নয়। প্রত্যেক মানুষই তার নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে । দানশীলতা নির্দিষ্ট সীমারেখায় আবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে এবং শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক কর্মকাণ্ডে এর পরিধি পরিব্যাপ্ত ও বিস্তৃত।

রব্বে কারীম যেমন জগতবাসীকে অগণিত নিয়ামত দান করে করুণায় আবৃত করেছেন, মানুষের উচিত অসহায় মানুষের প্রয়োজনে আল্লাহর দেয়া নেয়ামত-সম্পদ থেকে দান সদকার হাতকে প্রসারিত করা। তবেই তো আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন সম্ভব।

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ, মিরপুর, ঢাকা।