| |
               

মূল পাতা ফিচার ৩৯ বছর ধরে গোপনে চলত মিসর-ইসরাইল বিমান! / ‘প্রথম বারের মতো’ মিসরের বিমান গেল ইসরাইলে


৩৯ বছর ধরে গোপনে চলত মিসর-ইসরাইল বিমান! / ‘প্রথম বারের মতো’ মিসরের বিমান গেল ইসরাইলে


রহমতটোয়েন্টিফোর ডেস্ক     05 October, 2021     11:50 AM    


প্রথম বারের মতো প্রকাশ্যে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল গেল মিসরের বিমান। এর আগে গোপনে এ রুটে ৩৯ বছর ধরে মিসর-ইসরাইল বিমান চলাচল করত। ব্যবহার করা হত না কোনো লোগে।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দ্যা ডনের খবরে বলা হয়, মিসরের জাতীয় বিমান সংস্থার লোগোসংবলিত বিমান রোববার প্রথমবারের মতো ইসরাইলের একটি বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এ ঘটনাকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল।

ইসরাইলি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার মুখপাত্র অফার লেফলার গণমাধ্যমকে জানান, এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট কায়রো-তেলআবিব রুটে চলাচল করবে।

ফিরে দেখা
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, গোপনে মিসরের কায়রো থেকে ইসরাইলের তেলআবিবের মধ্যে ৩৯ বছর ধরে যোগাযোগ রেখেছে ওই ‘অস্তিত্বহীন’ বিমান।  

এয়ার সিনাইয়ের এ রুটে আগে মিসরের ইজিপ্টএয়ার সংস্থার নেফারতিতি অ্যাভিয়েশনের বিমানের চলাচল ছিল। পরবর্তীকালে এই রুটেই এয়ার সিনাই নামে ওই বিমান চলাচল শুরু হয়।

কিন্তু ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি এবং পরবর্তীকালে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলে রাজনৈতিক চাপে পড়ে মিসর। ওই চুক্তির পরই আরব দেশগুলো মিসরকে বয়কট করে।

মিসরের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। ভেতর এবং বাইরে এভাবে চাপের মধ্যে মিসর সম্পূর্ণ ‘অভূতপূর্ব’ একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। অন্যদিকে মিসরকে শান্তিচুক্তির শর্তের কথাও মাথায় রাখতে হয়েছিল।

চুক্তির শর্ত যাতে না ভাঙে, সে জন্য একপ্রকার লুকিয়ে এই রুটে বিমান চালানো অব্যাহত রাখে মিসর। কিন্তু কীভাবে?

গোপনে বিমান যোগাযোগ চালু রাখতে তখনই এয়ার সিনাই সংস্থা তৈরি করে ফেলে তারা। এর আগ পর্যন্ত এই রুটে ইজিপ্টএয়ার নামে বিমান চলাচল করত।

ইজিপ্টএয়ারে পাইলট, বিমান, এয়ার হোস্টেস— সব নিয়েই উড়াল দিতে শুরু করে এয়ার সিনাই। নাম বদলানোর পাশাপাশি তখন আরও একটি কাজ করেছিল মিসর।

গোপনীয়তা বজায় রাখতে বিমানের গায়ে লোগোর ব্যবহার বন্ধ করে দেয় দেশটি। এমনকি এই সংস্থার কোনো ওয়েবসাইটও ছিল না।

গোপনে যেভাবে কাটতে হতো টিকিট
কোনো যাত্রী যদি কায়রো থেকে তেলআবিব যাওয়ার জন্য অনলাইনে টিকিট কাটতে চাইতেন, তা হলে তাকে খুব সমস্যায় পড়তে হতো। কারণ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কায়রো থেকে তেলআবিব যাওয়ার সরাসরি এই একটিমাত্র বিমান এয়ার সিনাইয়ের কোনো ওয়েবসাইট তিনি খুঁজে পেতেন না।

কিন্তু ঘুরপথে তেলআবিব যাওয়ার জন্য একাধিক বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট ভেসে উঠত তার সামনে। তবে এয়ার সিনাইয়ের টিকিট বুক করতে আগ্রহীদের জন্য কিছু বার্তা ভেসে উঠত ইন্টারনেটে। তাতে ক্লিক করলে ট্রাভেল এজেন্সির ইমেইল, যোগাযোগ নাম্বার পাওয়া যেত।

সেই নাম্বারে যোগাযোগ করে যাত্রীকে নিজের বিবরণ মেইল করে পাঠাতে হতো। পাসপোর্টের স্ক্যান কপি এবং আরও যা যা তথ্য জানতে চাইত, সেসবই ইমেলের মাধ্যমে পাঠাতে হতো। সব কিছু বিবেচনা করে তার পর ইমেইলে ফ্লাইটের সময়, তারিখ এবং বিমান ভাড়া জানিয়ে দিত ওই সংস্থা।

এর পরই নির্দিষ্ট ঠিকানায় টাকা দিতে হতো যাত্রীকে। এখানেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে ক্রেডিট কিংবা ডেবিটের মতো কোনো কার্ড ব্যবহার করা যেত না। শুধু নগদেই সেই টাকা দিতে হতো যাত্রীকে।

এত গোপনীয়তার কারণে যাত্রীদের মধ্যে একটি অনিশ্চয়তাও কাজ করত। তারা ঠিক জায়গায় টাকা দিলেন কিনা, তা বিমানের ওঠার আগে পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারতেন না।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ১৯৭৯ সালে ইসরাইল ও মিসরের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়। চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল— দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করা। সেই হিসাবে ১৯৮২ সালে এয়ার সিনাই তৈরি করে মিসর। এর মাধ্যমে মিসরের রাজধানী কায়রো এবং ইসরাইলের তেলআবিবের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তখন থেকেই গোপনে মিসরের কায়রো থেকে ইসরাইলের তেলআবিবের মধ্যে ৩৯ বছর ধরে যোগাযোগ রেখেছে একটি ‘অস্তিত্বহীন’ বিমান।  

/জেআর/