| |
               

মূল পাতা ইসলাম জুমার বয়ান ‘সম্পদের সঠিক যাকাত আদায় করা মুমিনের পরিচায়ক’


‘সম্পদের সঠিক যাকাত আদায় করা মুমিনের পরিচায়ক’


রহমত ডেস্ক     15 April, 2022     04:42 PM    


ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেছেন, অবারিত কল্যাণের মাস রমজান চলছে। এই মাসে অন্যান্য আমলের ন্যায় অধিক সওয়াবের আশায় আমরা যাকাত আদায় করে থাকি। সম্পদের সঠিক হিসাব করে যাকাত আদায় করা মুমিনের পরিচায়ক। ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যাকাতকে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি এটাকে ইসলামের একটি মূল স্তম্ভ ঘোষণা করা হয়েছে। যাকাত দ্বিতীয় হিজরীতে ফরজ করা হয়। আজ (১৪ এপ্রিল) শুক্রবার ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেন, নামাজের পরে যাকাতের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করা হয়েছে, যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ সঞ্চয় করে, যাকাত না দেয়া পর্যন্ত তার ঐ সম্পদ হালাল হতে পারেনা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আপনি তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন, যাতে এর মাধ্যমে আপনি সেগুলোকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ (বরকতময়) করতে পারেন।’ (সূরা আত তাওবাহ-১০৩)। এ নির্দেশনা অনুযায়ী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন প্রকার সম্পদের জন্য বিভিন্ন রকম নেসাব (যাকাত ওয়াজিব হওয়ার সর্বনিম্ন পরিমাণ) নির্ধারণ করে যাকাতের বিভিন্ন হার নির্ধারণ করেছেন। সোনা-রূপা ও নগদ টাকা-পয়সার ওপর শতকরা আড়াই ভাগ, কৃষি উৎপাদনের উপর সেচ ব্যবস্থার আওতাধীন জমি হলে শতকরা ২০ ভাগ ও সেচ ব্যবস্থার আওতা বহির্ভূত জমি হলে শতকরা ১০ ভাগ, ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত ধার্য করেছেন। এমনি ভাবে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে থাকা গবাদি পশু প্রভৃতি চতুষ্পদ প্রাণীর ওপর বিভিন্ন হারে যাকাত ধার্য করেছেন। যাকাত প্রদান করুণার বিষয় নয়, বরং এটা হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক। যাকাত প্রদানের অর্থই হচ্ছে পাওনাদারের কাছে তার হক পৌঁছে দেয়া। কারণ, ধনীদের সম্পদে গরীবের হক আছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে অবশ্যই প্রার্থী (দরিদ্র) এবং বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আয যারিআত- ১৯)।

তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে যারা যাকাত আদায় করবে না তাদের পরিণাম সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য (ধন-সম্পদ) সঞ্চয় করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (যাকাত দেয় না), তাদেরকে এক কঠিন পীড়াদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। এরপর তা দ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। (তাদেরকে সম্বোধন করে) বলা হবে, ইহাই ওই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমাদের সঞ্চয়ের স্বাদ আস্বাদন কর।’ (সূরা আত তাওবাহ ৩৫)। অগণিত হাদীসে বিশ্বনবী সা. যাকাত আদায় না করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করেছেন।

তিনি আরো বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করবে না, তার সম্পদ কিয়ামতের দিন বিষধর সর্পের রূপ ধারণ করবে। সেটাকে তার গলায় পেচিয়ে দেয়া হবে। সে তার দুই পার্শ্বে দংশন করে বলবে, আমিই তোমার গচ্ছিত সম্পদ, আমিই তোমার সঞ্চিত ধনভান্ডার। (সুনান ইবনে মাজাহ)। যাকাত আর্থিক ইবাদত। তাই যাকাত প্রদান করতে গিয়ে আত্মপ্রচারণা শরীয়তসম্মত নয়। এটা তাকওয়ার পরিপন্থী। ব্যানার ঝুলিয়ে, সাইনবোর্ড লাগিয়ে, মাইকিং করে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যাকাত প্রদান করা কিংবা স্বল্পমূল্যের শাড়ি ও লুঙ্গি দ্বারা যাকাত দেয়া নিচু মানসিকতার পরিচায়ক। এটা সওয়াবকে নষ্ট করে দেয়। ইসলাম যাকাতসহ অন্যান্য দান-সাদকা গোপনে আদায়ের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা সাত ব্যক্তিকে তার (আরশের) সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন তার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়াই থাকবে না। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে অত্যন্ত গোপনভাবে দান-খয়রাত করে, এমনকি তার ডান হাতে যা কিছু দান করে তার বাম হাতও তা জানতে পারে না। (বুখারী, মুসলিম)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমিন।