| |
               

মূল পাতা রাজনীতি প্রধান ২ দলের অনড় অবস্থান পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

প্রধান ২ দলের অনড় অবস্থান পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে


রহমত নিউজ     24 September, 2023     12:07 PM    


নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানের জের ধরে এখন পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ অবশ্য বলছে, তারা কোন পাল্টা কর্মসূচি দেয়নি, বরং তাদের কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো জনমনে ‘ভীতি দূর করে নির্বাচনের আবহ’ তৈরি করা। তবে সরকারের পদত্যাগের যে দাবি বিরোধী দল করছে তাতে কোন আপোষ তারা করবে না। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের বক্তব্যকে ধর্তব্যেই’ আনতে রাজী নয় তারা। দলটির একজন নেতা বলছেন ‘সরকারের চাওয়া-না চাওয়ার গুরুত্ব এখন আর নেই’ বরং 'গ্রহণযোগ্য নির্বাচন' ছাড়া আর কিছুই তারা গ্রহণ করবেন না। আর আওয়ামী লীগের আপোষ না করা কিংবা বিএনপির সরকারের পদত্যাগ ছাড়া নির্বাচন নয়- এমন মুখোমুখি পরিস্থিতির মধ্যে দেশব্যাপী পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে উভয় দল, যা আরও বেগবান হতে পারে নভেম্বরের শেষ নাগাদ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলছেন উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে ব্যর্থ হলে অক্টোবরে নভেম্বরে কেউ না চাইলেও মনে হচ্ছে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকবে না। তবে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সহিংস হোক আর না হোক- আবারো একটি একতরফা নির্বাচনের পরিস্থিতির আশংকাও করছেন অনেকে।

কী করছে দুই দল
বিরোধীদল বিএনপি সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এখন তাদের বার দিনের কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে ঢাকায় সমাবেশ ছাড়াও আছে বিভিন্ন অঞ্চলে রোডমার্চ ও সমাবেশের কর্মসূচি। দোসরা অক্টোবরের পর দলটি আর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ৪ঠা অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে রেখেছে। আওয়ামী লীগ এর আগেও ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিনেই পাল্টা সমাবেশ করেছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, তারা কোন পাল্টা কর্মসূচি পালন করছেন না বরং তারা নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত করছেন।নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ জনমনে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করছেন। সে কারণেই আমরা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে নির্বাচনের একটি আবহ তৈরির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছি।

তবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলছেন, আওয়ামী লীগের এসব চাওয়া- না চাওয়ার কোন গুরুত্ব এখন আর তাদের কাছে নেই। মানবাধিকার,দুর্নীতি, গণতন্ত্র ছাড়াও ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব এখন কথা বলছে। আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই আর। দাবি তাদের মানতেই হবে। এর আগে নির্বাচন নিয়েও কারও কোন মাথাব্যথা নেই। একতরফা কিছু করে পার পাওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক বিশ্বের ভূমিকায় মানুষের মধ্যে একটি আশার সঞ্চার হয়েছে। আওয়ামী লীগ এককভাবে আগের মতো কিছু করে পার পাবে না।

বিএনপি নেতারা বোঝাতে চাইছেন যে তাদের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনের আগে সরকার পদত্যাগ না কলে সে নির্বাচন নিয়ে তাদের আগ্রহ থাকবে না।

আবারো একতরফা নির্বাচন?
বিএনপিকে ছাড়াই কোন নির্বাচন হলে সেটি ২০১৪ নির্বাচনের মতো একতরফা নির্বাচনে পর্যবসিত হতে পারে- অনেকের মধ্যে এমন আশঙ্কাও আছে। যদিও আব্দুর রহমান বলছেন, একতরফা নির্বাচনের কোন পরিকল্পনা তাদের নেই। আমরা একতরফা নির্বাচন করবো না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতো আমরাও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। কিন্তু কেউ না এলে তাকে জোর করে আনার কিছু নেই। মানুষ ভোটে অংশ নিলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। তারাও নিজেদের মতো নানা কর্মসূচি পালন অব্যাহত রাখবেন। “নির্বাচন কারও জন্য বসে থাকবে না। আবার ভয় দেখিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না।

বিএনপি অবশ্য বলছে, এবার তাদের নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে তেমন নির্বাচন করার সুযোগও তারা দেবে না। দলের নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই নতুন করে ঢাকা কেন্দ্রিক বেশ কিছু বড় মাপের কর্মসূচি তারা ঘোষণা দেবেন যেগুলো তাদের আশা সরকারের ওপর বড় ধরণের চাপ তৈরি করবে।

অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলছেন, দুই পক্ষের দৃশ্যত অনড় অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। তবে দেখার বিষয় হবে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়ায়। এখনো সব অস্পষ্ট। শুধু বোঝা যাচ্ছে ছাড় দেয়ার আলামত নেই কারও মধ্যে। এটি চলমান থাকলে দু পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি দেশকে কোন দিকে নিয়ে যায় সেটা সময়ই বলে দেবে।

কিন্তু সমাধান কি রাজপথেই?
বিএনপি নেতারা প্রায়শই বলছেন সরকার সহজভাবে দাবি না মানলে ‘ফয়সালা হবে রাজপথেই’। অর্থাৎ আন্দোলনের মাধ্যমেই তারা সরকারকে বাধ্য করতে চান।কিন্তু আওয়ামী লীগও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে রাজপথে তারাও ছেড়ে কথা বলবেন না। যদিও উভয়পক্ষের এমন বাহাসের বাইরেও অনেকের চোখ আছে- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব কী পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যেই দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে চাপ তৈরি করে চলেছে সরকারের ওপর, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও।

আবার বিএনপি নেতারা মনে করছেন, একদিকে আন্দোলন আর অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপ- দুয়ে মিলেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান অর্জনে তারা সফল হবে ন। তবে দু পক্ষেই কেউ কেউ বলছেন যে – শেষ পর্যন্ত পশ্চিমাদের দিক থেকে উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে কোন প্রস্তাব এলে তার ভিত্তিতেও সংকট নিরসনের একটি পথ উন্মোচন হলেও হতে পারে।

ওদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে তারা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। কিন্তু তার আগে যদি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু না হয় তাহলে অনেকের মধ্যে তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এমনকি সহিংসতার আশংকাও আছে।