| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক ইউরোপ ব্রিকসে কোন কোন দেশ যোগ দিতে চায়, কারণ কী?


ব্রিকসে কোন কোন দেশ যোগ দিতে চায়, কারণ কী?


স্বাস্থ্য ডেস্ক     22 August, 2023     04:23 PM    


গোটা দুনিয়ার নজর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে শুরু হতে যাওয়া উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস সম্মেলনের দিকে। নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত পাঁচ জাতির জোটের ১৫তম সম্মেলনের পর্দা উঠছে আজ। ২২ থেকে ২৪ আগস্ট সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ভারত, চীন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা ইতোমধ্যে জড়ো হয়েছেন। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকায় অংশ নিচ্ছেন না। তবে অনেক দেশের সরকারপ্রধান থাকছেন এবারের সম্মেলনে। এবারের ব্রিকস সম্মেলন অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তার উল্লেখযোগ্য কারণ, নতুন সদস্যপদ বাড়ানো। ইতোমধ্যে ৪০টিরও বেশি দেশ অর্থনৈতিক জোটটিতে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। অনেকে লবিংও শুরু করেছে। নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং কোন কোন দেশ যোগ্য বলে বিবেচিত হবে– এ নিয়ে আগ্রহ সবার। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোতে এখনও বিশ্বের এক চতুর্থাংশ সম্পদ রয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক জিডিপি’র এক তৃতীয়াংশ এখনও ব্রিকস দেশগুলোর। একদিকে শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে থাকা অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া জোটে অন্তর্ভুক্তের বড় একটা কারণ।

ব্রিকস কী?
২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন মিলে ‘ব্রিক’ নামে একটি অনানুষ্ঠানিক জোট গঠন করে। ২০১০ -এ দ. আফ্রিকা এতে অন্তর্ভুক্ত হলে ব্রিকের নাম বদলে দাঁড়ায় ‘ব্রিকস’ (BRICS)। এই জোটটিকে পশ্চিমাদের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০১ সালে গোল্ডম্যান শ্যাক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল একটি গবেষণা পত্র তৈরি করেছিলেন। সেখানে তিনি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীনের একটি জোট হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন। আর এটি তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার উদ্যোগেই। ফলে ব্রিকসেকে পশ্চিমাবিরোধী জোট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ব্রিকসের সদস্য কারা?
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীন জোটটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ভূ-রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য এবং উন্নয়ন ঘটানো ব্রিকসের লক্ষ্য। সদস্যদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় জোট। তবে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০-তে থাকা দেশগুলোই ব্রিকসের সদস্য। ফলে ভাবা হচ্ছে, জি-২০-কে দুর্বল দেখতেই আলাদা নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাচ্ছে চীন-রাশিয়া। ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, আলজেরিয়া, বলিভিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, ইথিওপিয়া, কিউবা, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, কমোরোস, গ্যাবন এবং কাজাখস্তানসহ ৪০টির বেশি দেশ এই ফোরামে যোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। ২০২৩ সম্মেলন থেকেই যেন জোটে অন্তর্ভূক্ত করার ডাক আসে, এ নিয়ে তদবিরও চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু এসবের পেছনে মস্কো-বেইজিংয়ের একটা চাল আছে বলে মনে করছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা।

জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশও। গত ১৪ জুন জেনেভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রিকসের সদস্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সাইরিল রামাপোসার মধ্যে বৈঠকের পরে ওই আবেদনের বিষয়টি সামনে আসে। তবে ঢাকা এবার যুক্ত হতে পারছে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। দ. আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ও ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার জোহানেসবার্গে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ব্রিকসের সম্প্রসারণ বৈশ্বিক প্রভাব ফেলতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস ইউনিভার্সিটির রাইজিং পাওয়ার অ্যালায়েন্স প্রজেক্টের জ্যেষ্ঠ ফেলো মিহায়েলা পাপা বলেছেন, ‘জোটের সম্প্রসারণ অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা। কেউ কেউ আছেন যারা ব্রিকসে সহজে ভিড়তে চায়। সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে জোটের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা।’

ব্রিকসে কোন কোন দেশ যোগ দিতে চায়, কারণ কী?
এদিকে ওয়াশিংটনে স্টিমসন সেন্টার থিংক ট্যাঙ্কের চায়না প্রোগ্রামের পরিচালক ইউন সানের মতে, জোট যত বড়, তারা তত বেশি শক্তিশালী একটি সমষ্টিগত জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে। পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীন উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব করবে।’ দ্রুত ব্রিকসের সম্প্রসারণের তাগিদ দিচ্ছে চীন। কিন্তু তাদের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে ভারত ও ব্রাজিল। ব্রিকস ওয়াশিংটন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বিরোধী একটি সংস্থায় পরিণত হতে পারে। এই উদ্বেগ থেকে আপত্তি জানাচ্ছে ব্রাজিল। ভারত চায় নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট বিধিমালা জারি হোক। যার মাধ্যমে সহজেই অন্য দেশ ও সংস্থার কাছাকাছি আসতে পারে এবং প্রয়োজনে সদস্য করে নেওয়া যাবে। ব্রিকসের যেকোনও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সব সদস্য দেশের সম্মতি প্রয়োজন।


সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, আল জাজিরা