| |
               

মূল পাতা জাতীয় নির্যাতন বন্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ১০ মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ বিবৃতি


নির্যাতন বন্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ১০ মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ বিবৃতি


রহমত নিউজ ডেস্ক     25 June, 2023     11:52 AM    


বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন এজেন্সি ও নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান নির্যাতন ও অপমানজনক আচরণ ও ভিকটিমের পর্যায়ক্রমিক প্রতিকার পাওয়ার অভাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশি-বিদেশি ১০টি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। এতে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে। নির্যাতিত ব্যক্তি, তাদের পরিবার এবং তাদের পক্ষে যেসব মানবাধিকারের পক্ষের কর্মীরা কথা বলেছেন তাদের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানাচ্ছি।

আগামীকাল (২৬ জুন) সোমবার নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সমর্থন বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে যৌথ বিবৃতি দেয় সংগঠনগুলো। বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো হলো- এন্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন এগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ান্সেস, মায়ের ডাক, অধিকার, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার। 

যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছে, বাংলাদেশে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন এবং অশোভন আচরণ দীর্ঘদিন ধরে এবং বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। স্বীকারোক্তি আদায়ে নির্যাতন করা হয়। ভিকটিমকে অবমাননা করা হয়। তাকে আতঙ্কিত করা হয়। ভীতি প্রদর্শন, অর্থ আদায়ে হাতিয়ার হিসেবে রাজনৈতিক উদ্দেশে রাষ্ট্র নিয়মিতভাবে এসব ব্যবহার করে। রাজনৈতিক বিরোধী, ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠ, ঝুঁকিতে থাকা গ্রুপ এমনকি সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো হয় নিষ্পেষণ। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা, গোয়েন্দা বিষয়ক এজেন্সিগুলো, আধাসামরিক গ্রুপগুলো এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা নির্যাতন এবং অশোভন আচরণ করেন। নিন্দনীয় বিষয় হলো, এসব নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর সদস্যদের বিচার করার ঘটনা বিরল। এর পরিবর্তে তারা দায়মুক্তি উপভোগ করেন। কারণ রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ, সরকারের সমালোচক এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে তাদের নিষ্পেষণকে বৈধতা দেয় সরকার। এতে আরও বলা হয়, যখন ভিকটিমকে পুলিশ তাদের হেফাজতে তুলে নিয়ে যায়, তখন তাদের ওপর নির্যাতন ও অন্য অমানবিক আচরণের রিপোর্ট অব্যাহতভাবে প্রকাশ পেয়েছে। নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর রিপোর্টও আছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়নে আইনপ্রয়োগকারী এজেন্সিগুলো এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ব্যবহার করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। এ নিয়ে রিপোর্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উপরন্তু বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের দমিয়ে রাখতে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সির সদস্যরা অন্যদের সঙ্গে অসদাচরণ করে। এর মধ্যে আছে সাধারণ নাগরিকদের নির্যাতন, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, খেয়ালখুশিমতো আটক, হয়রানি, ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি, নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার, অবৈধ মাদক রাখার দায়ে সাধারণ লোকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়া, ভীতি প্রদর্শন এবং গণহারে গ্রেপ্তার। 

এতে আরো বলা হয়, পর্যায়ক্রমিক সরকারগুলো দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু করেছে। আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগে ঘাটতি থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এই দায়মুক্তি দেয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, দেশের আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে আছে পুলিশ ও র‌্যাব। নির্যাতনের শিকারে পরিণত হওয়া সত্ত্বেও ভিকটিম ও তাদের পরিবার হয়রানি ও প্রতিশোধ নেয়ার ভয়ে কথা বলার সাহস দেখান না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর ভিকটিমদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে অথবা তারা অসদাচরণের শিকার হয়েছেন। তাদের আত্মীয়স্বজন হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শনের শিকার হয়েছেন। উপরন্তু অভিযোগ আছে, যখন নিরাপত্তা হেফাজতে কেউ মারা যান তখন এমন মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দেয়া হয়। এ বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন সেশন জজ কোর্টে ২০১৩ সালের একটি আইনের অধীনে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অর্থ দাবির অভিযোগ দাখিল করেছিলেন ঢাকার দু’জন ব্যবসায়ী।  সাতক্ষীরার সাংবাদিক রঘুনাথ খা অভিযোগ করেন নিরাপত্তা হেফাজতে ডিবির হেফাজতে তাকে চোখবেঁধে রাখা হয়েছিল। সে অবস্থায় নির্যাতন করা হয়েছে এবং বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছে ২৩শে জানুয়ারি। এর আগে তাকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৯শে জানুয়ারি তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। আবু হোসেন রাজন নামে একজন আইনজীবী বলেন, ২৯শে জানুয়ারি তাকে আটক করা হয়। বাইরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। এক সপ্তাহ ধরে জানা যায়নি তিনি কোথায় আছেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় শনাক্ত করে। কিন্তু প্রতিদিন রাজনকে ডিবি প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। হেফাজতে থাকা অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদকালে তাকে নির্যাতন করা হতো। ৩০শে মার্চ জেল থেকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয় তাকে। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের কারণে গাজীপুরের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম মারা যান। এরপর তিনি যে নিরাপত্তা হেফাজতে মারা গেছেন তার নিশানা মুছে দেয়ার চেষ্টা হয়। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ বানোয়াট কাহিনী ফাঁদে। আমরা অবিলম্বে নির্যাতন এবং দায়মুক্তি বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাই। নির্যাতনের শিকার ভিকটিম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানাই। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাই। 

সূত্র : মানবজমিন