| |
               

মূল পাতা ফিচার নারীর ধর্ষণ শনাক্তে নিষিদ্ধ ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ আসলে কী?


নারীর ধর্ষণ শনাক্তে নিষিদ্ধ ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ আসলে কী?


জাকির উসমান     06 October, 2021     02:03 PM    


বিশ্বের বহু দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে এ টেস্ট। ২০১৫ সালে ভারতে এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করা হয়। এ পরীক্ষায় হাতে গ্লাভস পরে নারীর বিশেষ অঙ্গে আঙুল প্রবেশ করিয়ে তার ‘টেন্ডারনেস’ পরীক্ষা করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, এই নামে চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোনো পরীক্ষা নেই।

কিন্তু বাংলাদেশে এক সময় ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুদের শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে আদালত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে এই পরীক্ষা করাতে হত। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর ফরেনসিক বিভাগে এই পরীক্ষা হত।

মাহমুদ বলেন, হাতে গ্লাভস পরে নারীর একান্ত প্রত্যঙ্গে আঙুল প্রবেশ করিয়ে তার ‘টেন্ডারনেস’ পরীক্ষা করা হয়। এই টেস্টের নামই ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা শতভাগ নির্ভুল নয়, এবং এ নিয়ে অনেক সময় কোনো উপসংহারেও পৌছানো সম্ভব হয় না।

কী আছে আদালতের নির্দেশনায়?
২০১৮ সালের এপ্রিলে দেওয়া রায়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে আদালত বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর পরীক্ষা একজন নারী চিকিৎসক বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে করাতে হবে। এ সময় একজন নারী গাইনোকোলজিস্ট, একজন নারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ভিকটিমের একজন নারী আত্মীয়, একজন নারী পুলিশ সদস্য ও নারী সেবিকা রাখতে হবে।’

‘ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ যে সনদ দেবেন তাতে অভ্যাসগত যৌনতা বলে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। পরীক্ষার পর ধর্ষণের শিকার নারীর যাবতীয় গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। এছাড়া, বিচারাধীন মামলায় নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে নারীকে অমর্যাদাকর কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।’

রায়ে আরও বলা হয়, ‘যদি ধর্ষণের শিকার নারীর আঘাত বা ক্ষত গভীর থাকে, সেক্ষেত্রে একজন গাইনোকোলজিস্টের কাছে তাকে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে ঠিক কোনো কারণে ধর্ষণের শিকার নারীর এই গভীর ক্ষতের পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, তা লিখতে হবে। কোনো আঘাত বা ক্ষত না থাকলে ধর্ষণের শিকার নারী, শিশু ও তরুণীর ক্ষেত্রে স্পার্স স্পেক্যুলাম (এক ধরনের যন্ত্র, যা দিয়ে যৌনাঙ্গ এলাকায় পরীক্ষার করা হয়) পরীক্ষা করা যাবে না।’

একইসঙ্গে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ‘পিভি টেস্ট’ নামে পরিচিত আঙুলের সাহায্যে বায়ো ম্যানুয়াল টেস্ট করাও নিষিদ্ধ করেন আদালত।

যে কারণে বিরোধিতা?

২০১৮ সালে এই পরীক্ষা নিষিদ্ধে আদালতের দেওয়া রায়ে বলা হয়, ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই টেস্টের কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।

আদালত আরও বলেন, মামলা চলাকালে ধর্ষণের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে সাবধান হতে হবে আইনজীবীদের। নারীর প্রতি অমর্যাদাকর কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। সেক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো পক্ষের আইনজীবী যেন ভিকটিমকে মর্যাদাহানিকর কোনো প্রশ্ন না করে।

২০১৩ সালে এই পদ্ধতি নিষিদ্ধে যারা রিট আবেদন করেছিলেন, তাদের অন্যতম বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, এই পরীক্ষাটি নারীর জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং অসম্মানজনক।

মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, ধর্ষণ প্রমাণে 'টু ফিঙ্গার টেস্ট' একটি 'অযৌক্তিক' এবং 'অমানবিক' পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ভিকটিমকে আরেকবার ধর্ষণের শিকার হবার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

/জেআর/