| |
               

মূল পাতা রাজনীতি আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগেই আ‘লীগকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে


নির্বাচনের আগেই আ‘লীগকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে


রহমত নিউজ ডেস্ক     20 November, 2023     11:44 AM    


বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রস্তুতি শুরু করলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটিকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও দলের নেতাদের ভাষ্য হলো সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। তাদের আশা বিএনপিসহ বিরোধী দল না হলেও জাতীয় পার্টিসহ আরও অনেকগুলো দলের নির্বাচনী কার্যক্রম ২/১ দিনের মধ্যে শুরু হলে একটি ‘নির্বাচনমূখর’ পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে। রবিবার সন্ধ্যায় দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সারাদেশের মানুষ ‘গণজাগরণের ঢেউ’ তুলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেছেন, সরকারি দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচন সম্পন্ন করার আগেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে নির্বাচন করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি আওয়ামী লীগকে সেই নির্বাচন পর্যন্ত দেশকে নেয়ার মধ্যেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তারা কীভাবে সেটি সামাল দিতে চায় সেটিও দেখার বিষয় হবে।

যদিও আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো নির্বাচনের জন্য সহিংসতা মুক্ত নিরাপদ ও আস্থার পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে নির্ভয়ে ভোট দেয়া সম্ভব হবে। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীর অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে জমজমাট এবং সে কারণে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘ভোট উৎসবে’ অংশ নিবে। দুই একটা বাস পুড়িয়ে কেউ নির্বাচনের পরিবেশে অনিরাপদ করতে পারবে না। মানুষ এই নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী সাতই জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপিসহ বেশ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত দলগুলো নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে ‘একতরফা নির্বাচন’ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আহবান জানিয়েছে।

সহিংসতামুক্ত স্বস্তির পরিবেশ
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধিতার জের ধরে গত ২৮শে অক্টোবরের সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিক হরতাল অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ অনেকগুলো ছোট বড় রাজনৈতিক দল। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে বাসে আগুনসহ নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। বিএনপিসহ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত দলগুলো নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে ‘একতরফা নির্বাচন’ তারা মেনে নিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অনেকের মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি কেমন হয় তা নিয়ে উদ্বেগ আছে।

জোবাইদা নাসরীন বলছেন, একটি সহিংসতামুক্ত স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করাটাই নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সরকার যা-ই করুক, মানুষ নির্ভয়ে ভোটের পরিবেশ না পেলে ভোট দিতে আসবে না। আর ভোটাররা না এলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।

বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতাপূর্ণ পরিবেশে হয়েছিলো। সে কারণে ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী দল অংশ নিলেও সেই নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছিলো। দুটি নির্বাচন নিয়েই ব্যাপকভাবে বিতর্ক আছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান অবশ্য বলছেন, মানুষ নির্ভয়ে নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ ভোট দিবে। কেউ দু একটি চোরাগোপ্তা হামলা করলেও সেটি এতো বড় নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে না। আরও কয়েকদিন পর পুরো জাতি নির্বাচনী উৎসবে মেতে উঠবে। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। মানুষকে ভোটে কেউ বাধা দিতে আসলে মানুষই তা প্রতিরোধ করবে।

একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ সামলানো
অনেকেই মনে করেন আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অধিকাংশ দলকে নির্বাচনে এনে ‘একতরফা নির্বাচনের’ অপবাদ ঠেকানো। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবে না। আবার দেশের চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসেবে পরিচিত জামায়াতের নিবন্ধন নেই। ফলে এমনিতেই সাতই জানুয়ারির নির্বাচনে এ দুটি জোট ও দলের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা নেই।

কলিমউল্লাহ বলেন, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক যে নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাইছে সেটি এখানেই হোঁচট খেয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে অন্য সব দলের নির্বাচনে অংশ নেয়া নিশ্চিত করা।

আব্দুর রহমান অবশ্য বলছেন, বেশিরভাগ দলই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে এবং কেউ অংশ না নিলে সেটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কেউ পরাজয়ের ভয়ে নির্বাচনে না এলে তাকে কে নির্বাচনে আনতে পারবে? অধিকাংশ দলই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এবং প্রতিটি আসনে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

দল ও জোটে সমন্বয়
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল ও জোটগত প্রস্তুতি নিলেও আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোট, মহাজোট এবং নতুন গঠিত কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমন্বয় করে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করাটা দলটির সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী হলেও আগের নির্বাচনগুলোতে মহাজোটে থাকা কয়েকটি দল ছাড়াও নতুন গঠিত কয়েকটি দলও আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে আগ্রহী। মূলত বিএনপি না এলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগই আবার ক্ষমতায় আসবে ধারণা থেকেই এসব দলগুলো আওয়ামী লীগের সাথেই গাঁটছড়া বেধে থাকতে আগ্রহী।

প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, যেসব দলগুলোর এমন আগ্রহ ব্যক্ত করেছে তাদের মূল লক্ষ্য হলো জোটের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা। ১৪ দল আগে থেকেই আছে আওয়ামী লীগের সাথে। নতুন একটি দল তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মহাজোটে একাধিক দল আছে। সবাই সরকারি দলে থাকতে চায়। দেখা যাক এগুলো কীভাবে আওয়ামী লীগ সমন্বয় করে।

আওয়ামী লীগ এখন এককভাবে তাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং এর অংশ হিসেবে দলের আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন সংগ্রহের কাজ এখন চলছে। পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটে থাকা দলগুলোর সঙ্গেও তাদের একটি সমঝোতা হয়ে আছে। মহাজোটের অংশ জাতীয় পার্টি গত সংসদে বিরোধী দল হিসেবে ছিলো। এবারও তারা আলাদা করে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেছে। সোমবার থেকেই দলটি তাদের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী নেতাদের কাছে আবেদন গ্রহণ করা শুরুর কথা রয়েছে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মধ্যকার মতবিরোধ প্রকাশ পাচ্ছে।

জাতীয় পার্টির নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জি এম কাদের এককভাবে নির্বাচন করতে আগ্রহী। আর রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকা নেতারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অংশ হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় পার্টির উভয় অংশকে এসব বিষয়ে নিষ্পত্তিতে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেই যেতে হবে। তবে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি এককভাবেই অংশগ্রহণ করবে-এটি অনেকটাই নিশ্চিত।

জোবাইদা নাসরীন বলেন, এর বাইরে নিজের দলেই কোন্দল সামলানো নিয়ে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক প্রার্থী এবং এ নিয়ে কোন্দল আছে। অনেক জায়গায় জোটের প্রার্থী। এসব সামাল দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সহজ কাজ হবে না।

আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দেয়া
নির্বাচনের আগেই সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের চিঠির জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই। জবাবে বিএনপি আলোচনার পরিবেশ তৈরি সরকারের দায়িত্ব বললেও আওয়ামী লীগ বলেছে -এখন আর সংলাপের সময় নেই। কিন্তু এরপরেও নানাভাবে চাপ আসছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ওপর। শ্রমিক অধিকার হরণ হলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বাংলাদেশের একজন শ্রমিক নেত্রীর নাম উচ্চারণ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিশেষ কোন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেই মনে করেন অনেকে।

জানিপপ চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, একতরফা নির্বাচন হয়ে গেলেও নির্বাচনের পরে অনেক পদক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ কিন্তু তার আগেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোন পদক্ষেপ নেয় কি না তাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে। সংলাপের জন্য রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ নেয়ার কথা তুলেছেন বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। তেমন কিছু হলে সেখান থেকে নাটকীয় কোন কিছু হয় কি-না দেখতে হবে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এটি নিশ্চিত।

আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না এলে আন্তর্জাতিক চাপ সামলানো বা দেন দরবার করাটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে নির্বাচনের বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য।

তবে আওয়ামী লীগে নেতা আব্দুর রহমান বলছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছে এবং আওয়ামী লীগও সেটাই চাইছে। এখানে চ্যালেঞ্জের কিছুই নেই। আমরা মনে সবার উচিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা করা।