| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ মোদীর ঘনিষ্ঠ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগের অর্থ কী?


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

মোদীর ঘনিষ্ঠ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগের অর্থ কী?


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     02 September, 2023     02:11 PM    


ভারতের আদানি শিল্প গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন এক গুচ্ছ অভিযোগ ওঠার পরে তাদের শেয়ারের অনেকটা পড়ে গেলেও শুক্রবার দুপুর নাগাদ সামান্য বেড়ে যায়।অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট বা ওসিসিআরপি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মরিশাস ভিত্তিক দুটি ‘অস্বচ্ছ’ সংস্থার মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে যার ফলে আদতে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম বেড়েছে। মরিশাস ভিত্তিক ওই দুটি অস্বচ্ছ সংস্থার মালিক আসলে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার পরিবারের ঘনিষ্ঠ তিন ব্যক্তি, এমনটাও জানিয়েছে ওসিসিআরপি। পরিবারের অর্থই ঘুরিয়ে নিজেদের সংস্থায় বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই অস্বচ্ছ সংস্থাগুলির বিনিয়োগের ফলে গোষ্ঠীটিতে আদানি পরিবারের অংশীদারিত্ব আইনি সীমা লঙ্ঘন করেছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সব অভিযোগকেই আদানি গোষ্ঠী উড়িয়ে দিয়ে বলেছে এর আগে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে যেসব অভিযোগ করা হয়েছিল, সেগুলোকেই নতুন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনটিতে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ এবছর জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে মি. আদানির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে “কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির” অভিযোগ করে। হিনডেনবার্গ রিসার্চের ঐ রিপোর্টে মরিশাস এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রতিবেদনে আরো অভিযোগ করা হয় যে ভারতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য নিজেদের পক্ষে নির্ধারণ করার জন্য এসব অফশোর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে। আদানি গ্রুপ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে এই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও তারা অস্বীকার করে। তবে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেগুলির তদন্ত হচ্ছে।

কী অভিযোগ উঠছে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে?
ওসিসিআরপির প্রতিবেদনটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে লন্ডনের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এবং ফিনান্সিয়াল টাইমস্। নতুন ভাবে ওঠা অভিযোগগুলির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস দাবী করেছে বিষয়টির যৌথ সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। দ্য গার্ডিয়ান এবং ফিনান্সিয়াল টাইমস্ ওসিসিআরপির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে প্রতিবেদন ছেপেছে, তাতে লেখা হয়েছে যে মরিশাস ভিত্তিক দুটি লগ্নীকারী সংস্থা – ইমার্জিং ইন্ডিয়া ফোকাস ফাণ্ড এবং ইএম রিসারজেন্ট ফাণ্ড ২০৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আদানি গোষ্ঠীর চারটি সংস্থা বড় ধরণের লগ্নি করেছে। লগ্নী করা এই অর্থ আবার বারমুডা-ভিত্তিক একটি লগ্নীকারী সংস্থা, যার নাম গ্লোবাল অপর্চুনিটিস ফাণ্ড, তাদের মাধ্যমে এসেছে।

ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে আবার এটাও বলা হয়েছে, যে তিনটি অর্থ লগ্নিকারী সংস্থা টাকা ঢেলেছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কিনতে, তাদের কাছ থেকে ১.৪ মিলিয়ন ডলার পরামর্শদাতার ফি হিসাবে পেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক সংস্থা এক্সেল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডভাইসারি সার্ভিসেস। এই এক্সেল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডভাইসারি সার্ভিসেসের মালিক হলেন বিনোদ আদানি, যিনি আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির ভাই। ওসিসিআরপি নানা ইনভয়েস এবং অভ্যন্তরীণ ইমেইল খতিয়ে দেখে বলেছে এক্সেল ইনভেস্টমেন্টস-এর পরামর্শ অনুযায়ীই তিনটি লগ্নীকারী সংস্থা (দুটি মরিশাসের, একটি বারমুডার) আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে অর্থ লগ্নী করেছে।

ওসিসিআরপি এটাও বলেছে, ওই তিনটি সংস্থার লগ্নী করা অর্থ যে আদানি পরিবার থেকেই এসেছে, এমন কোনও প্রমাণ তারা পায় নি। কিন্তু তাদের টিমের সাংবাদিকরা এরকম প্রমাণ খতিয়ে দেখেছেন, যাতে স্পষ্ট হয়েছে যে ওই তিনটি লগ্নীকারী সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কেনাবেচার সময়ে যে পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়েছে। ওসিসিআরপি-র তোলা এই অভিযোগগুলির সত্যতা বিবিসি নিজে যাচাই করে দেখে নি।

আইন লঙ্ঘিত হয়েছে
অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিত বসু ওসিসিআরপির পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলছেন যে তিনটি বিদেশী অর্থ লগ্নী সংস্থার পিছনে যে বিনোদ আদানি রয়েছেন, সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর অর্থ হল, বিনোদ আদানির নিজের যা শেয়ার রয়েছে আদানি গোষ্ঠীতে, তার সঙ্গে যদি ওই তিনটি বিদেশী ফাণ্ডের লগ্নী যোগ করেন, তাহলে আদানি এন্টারপ্রাইজ এবং আদানি ট্র্যান্সমিশন – এই দুটি কোম্পানিতেই ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে প্রোমোটারদের শেয়ার দাঁড়াচ্ছে ৭৮%। সিকিউরিটিজ কন্ট্র্যাক্টস (রেগুলেশান) অধিনিয়মের ১৯এ ধারা অনুযায়ী প্রোমোটার গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ শেয়ার হতে পারে ৭৫%। স্পষ্টতই আইন লঙ্ঘিত হয়েছে এখানে।

যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবী কংগ্রেসের
নতুন করে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলছেন যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্ত করতে হবে এই অনিয়মের। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিরোধীরা যৌথ সংসদীয় কমিটি দিয়ে অনিয়মের তদন্ত করার দাবী করেছিল। সরকার সেই দাবী অবশ্য মানে নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাহুল  গান্ধী বলেছেন, কেন শুধু একজন ব্যক্তিকে এভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী? কারণ, এক ব্যক্তি, যিনি মি. মোদীর খুব কাছের মানুষ, তাকে নিজের শেয়ার দর বাড়ানোর জন্য কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে দেওয়া হচ্ছে? সেই অর্থ দিয়েই ওই ব্যক্তি আবার দেশের বিমানবন্দর, বন্দর সব দখল করছেন। কেন এই ঘটনার তদন্ত হবে না? যৌথ সংসদীয় কমিটি দিয়েই এর তদন্ত করতে হবে।

এইসব পুনরুজ্জীবিত অভিযোগ খণ্ডন করছি
ওসিসিআরপি-র তোলা অভিযোগগুলি খণ্ডন করে কড়া বিবৃতি দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। তারা বলেছে এইসব অভিযোগ আগেই উঠেছিল, সেগুলোকেই ফের তুলে আনা হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে এইসব পুনরুজ্জীবিত অভিযোগ খণ্ডন করছি। এই অভিযোগগুলি ১০ বছর আগে মীমাংসা হয়ে যাওয়া কিছু ঘটনা। সেই সময়ে রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ অভিযোগের তদন্ত করেছিল বলে দাবী করেছে শিল্প গোষ্ঠীটি। নিরপেক্ষ বিচার সংস্থা এবং আপিল ট্রাইব্যুনাল – দুটিই নিশ্চিত করেছে যে লেনদেনগুলি আইন মোতাবেকই হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দেওয়ায় বিষয়টি চূড়ান্তভাবে মীমাংসা হয়ে গেছে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে।

ওসিসিআরপি-র অভিযোগ সামনে আসার পর বৃহস্পতিবার আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম অনেকটাই পড়ে যায়। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল যে বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধ হওয়ার সময়ে আদানি গোষ্ঠীর মূল কোম্পানি, আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের শেয়ার দর ৫.২% পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার কিছুটা হলেও দর বেড়েছে সংস্থার শেয়ারের।