| |
               

মূল পাতা রাজনীতি ইসলামী দল বাজেটে শিক্ষাখাতে ২০ শতাংশ বরাদ্দসহ ৬ দফা নীতিগত দাবি


বাজেটে শিক্ষাখাতে ২০ শতাংশ বরাদ্দসহ ৬ দফা নীতিগত দাবি


রহমত নিউজ ডেস্ক     30 May, 2023     07:59 PM    


আদর্শ জাতি গঠন ও চলমান সংকট উত্তরণে শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ন্যূনতম ২০% বা জিডিপির ৬ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন বলে বাজেট প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।

আজ (৩০ মে) মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ কনফারেন্স হলে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদের সভাপতিত্বে সংগঠনের পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ইউসুফ আহমাদ মানসুর। বাজেট প্রস্তাবনায় ৬ দফা নীতিগত দাবি ও খাত ভিত্তিক প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। 

নীতিগত দাবি 
১. দেশের সকল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।
২. বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। 
৩. শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ ব্যবস্থা চালু ও তা সহজলভ্য করতে হবে।
৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যয়ভার কমাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৫. কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে থোক বরাদ্দ দিতে হবে।
৬. নারী শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাতন্ত্র্যতা বজায়ে রাখতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
খাত ভিত্তিক প্রস্তাবনা

১. শিক্ষা খাত : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড একথা আমরা সবাই জানি কিন্তু এই শিক্ষা নিয়ে দেশের কোন সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত বাজেটের ন্যূনতম ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে এবং জিডিপির মিনিমাম ৬ শতাংশ প্রয়োজন কিন্তু বাংলাদেশের বাজেটে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১১ শতাংশ যা পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ এশিয়ার অনেক রাষ্ট্রের থেকেই কম, প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা খাতে যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে জ্ঞান সূচকে ১৩৮ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২ তম। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এত বিশাল অংকের মনোতৃপ্তির বাজেটে অবকাঠামোগত উন্নয়নের থেকে দেশের উচ্চ শিক্ষা খাত ও গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে, পাশাপাশি মাদরাসাসহ সব শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ক. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেট (পরিচালন) বরাদ্দ ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫৫টি গাইডলাইন ও কৃচ্ছতা সাধনের নির্দেশাবলী দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি বাড়ানো এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে সার্টিফিকেট বানিজ্যের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতিপূর্বের অভিজ্ঞতা দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মোট বাজেটের ২ শতাংশেরও কম বাজেট দেয়া হচ্ছে গবেষণা খাতে, গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বাজেটের ন্যূনতম ১০শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

খ. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এর তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি। এর মধ্যে ৯০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করছি সরকারিভাবে এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ নজরদারি করতে হবে এবং মেধাবী আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

গ. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেশির ভাগ কলেজে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার মান অসন্তোষজনক। পর্যাপ্ত শিক্ষক, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় গবেষণাগার, প্রযুক্তি ও কম্পিউটার ল্যাবের অপ্রতুলতা থাকলেও দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি ৮৮০টি কলেজে অনার্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ সরকারি কলেজ কিন্তু বেশির ভাগ কলেজে নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও গ্রন্থাগার। আমরা বলতে চাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সকল শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সকল ব্যয় বাজেট থেকে বরাদ্দ দিতে হবে। 

ঘ. কারিগরি শিক্ষা : কারিগরি শিক্ষা যে লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা হয়েছিল সে লক্ষ্যমাত্রা এখনো অর্জন করা যায়নি। শিক্ষক সংকট, শ্রেণীকক্ষ সংকট, যথেষ্ট গবেষণাগার না থাকায় কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার মান বৃদ্ধি ও লক্ষ্য পূরণে বিশেষ বরাদ্দের দাবি করা হয়।

ঙ. আলিয়া মাদরাসা : বাংলাদেশে সরকারি মাদরাসা মাত্র তিনটি। এর বাইরে উচ্চশিক্ষায় ২১৫টি কামিল, ৭৭টি ফাজিল (অনার্স) এবং এক হাজার ৯৭ টি ফাজিল (পাস) মাদরাসা রয়েছে। মাদরাসা খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা একেবারে সামান্য ও অপ্রতুল। সুতরাং আমরা মনেকরি, আলীয়া মাদরাসায় শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

চ. কওমী মাদরাসা : বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএএনবিইআইএস) তথ্যনুসারে ২০২২ সালে দেশে কওমি মাদরাসা ছিল ১৯ হাজার ১৯৯টি। জরিপ চলাকালীন সময়ে কওমি মাদরাসায় ২৪.২৮ শতাংশ মেয়েসহ মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ জন। কওমি মাদরাসার লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে জাতীয় শিক্ষা ধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে (আল হায়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া) শিক্ষা বোর্ডের জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।

২. শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থান :  ২০ লাখেরও বেশি  জনশক্তি প্রতিবছর শ্রম বাজারে প্রবেশ করে। যেখানে কর্মসংস্থানের মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি খাতে আর ৯৫ শতাংশই বেসরকারি উৎসে, বিবিএসের সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। সপ্তাহে ৩৫ ঘন্টা কাজ করে এমন বেকারের হিসাব ধরলে বর্তমান বেকারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করা জরুরী। আমরা মনেকরি কাঙ্খিত পরিমাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জামানতবিহীন বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

৩. বেকারত্ব নিরসন ও সামাজিক নিরাপত্তা : সামাজিক নিরাপত্তা আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের সামাজিক নীতির অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। দরিদ্রের ঊর্ধ্বগতি ও শিক্ষিত বেকারত্বের হার বাংলাদেশে বেড়েই চলছে, বাংলাদেশ দারিদ্র্য পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০২২-এ উঠে এসেছে দেশে ৩.৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে। প্রান্তিক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উন্নীত করার জন্য সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি করা হয়।

বাজেট প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সহ্-সভাপতি নূরুল বশর আজিজী, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইবরাহীম হুসাইন মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুন্তাছির আহমাদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মুহাম্মাদ আল আমিন সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক শিব্বির আহমদ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক  আল আমিন, প্রকাশনা সম্পাদক ইমরান হোসাইন নূর, অর্থ ও কল্যাণ সম্পাদক গাজী মুহাম্মাদ আলী হায়দার, আলিয়া মাদ্রাসা সম্পাদক মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম, স্কুল ও কলেজ সম্পাদক মুহাম্মাদ ইব্রাহিম খলিল, কার্যনির্বাহী সদস্য রায়হান চৌধুরী, খাইরুল হাসান মারজানসহ ঢাকাস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নগর নেতৃবৃন্দ।