| |
               

মূল পাতা আরো সম্পাদকীয় সমাজে তৈরি হচ্ছে স্থায়ী অর্থনৈতিক বিভাজন


সমাজে তৈরি হচ্ছে স্থায়ী অর্থনৈতিক বিভাজন


সৈয়দ শামছুল হুদা     05 March, 2022     12:21 PM    


গতকাল রাত থেকে একটি বিষয় আমাকে পীড়ন দিচ্ছে। স্থানীয় এক কাউন্সিলর এর অফিসে গিয়েছিলাম একটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য। তখন সেখানে কিছু মানুষকে দেখলাম, তারা নিজেদের আইডি কার্ড জমা দিয়ে যাচ্ছে। স্তুপাকারে রাখা এসব আইডি কার্ড দেখে কৌতুহল জন্ম হলো। জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কিসের জন্য ভাই? তিনি জানালেন, এগুলো দিয়ে টিসিবি কার্ড তৈরি করা হবে। এখন থেকে আর সবাই টিসিবি পণ্য কিনতে পারবে না। ওয়ার্ড অফিসগুলো থেকে প্রায় ১কোটি টিসিবি কার্ড ইস্যূ করা হবে। শুধু তারাই টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে পারবে। বিষয়টি দেখার সাথে সাথে আমার মাথায় কিছু প্রশ্ন খেলে গেলো।

ক। দেশে স্থায়ী বিভাজন তৈরি হচ্ছে কি?  প্রতিদিন দেশে বেপরোয়া গতিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। একদিনে গ্যাসের দাম দু’শ’ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পিঁয়াজের দাম একদিনেই বেড়েছে ১৫/২০টাকা বেড়েছে। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় সোয়াবিন তেলের দাম আকাশছোঁয়া। সরকার দেশে ১৭কোটি মানুষের কাছে অনেক বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করবে। আর সরকারের খুব কাছের কিছু গরীব মানুষগুলো কার্ডের মাধ্যমে কমমূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাবে। এতে দ্রব্যমূল্য নিয়ে গড়ে উঠা আন্দোলন খুব সহজেই দমন করা সম্ভব হবে।

খ। এসব কার্ড সরকারের খুব কাছের লোকেরাই পাবে। অনেকেই এখনো জানে না যে, কার্ড ছাড়া টিসিবি পণ্য কিনা যাবে না। যখন জানবে, ততদিনে ১কোটি কার্ডের কোটা পার হয়ে যাবে। ফলে সাধারণভাবে অনেক গরীব মানুষ যারা পণ্য কিনতে পারতো, তারা আর টিসিবি পণ্য পাবে না। তারা অসহায় হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। 

গ। কার্ড সিস্টেম হওয়ার কারণে সরকারের নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক রাখে না এমন গরীব মানুষও এখন আর টিসিবি পণ্য কিনতে পারবে না। সুুযোগ পাবে না। এক্ষেত্রে যারা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে, তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে। বাহ্যিকভাবে সিস্টেমটা ভালো মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদি একটি খারাপ প্রভাব পড়বে আমাদের ওপর। 

ঘ। আধার কার্ড, রেশন কার্ডের মতো বাংলাদেশেও টিসিবি কার্ডের যুগে প্রবেশ। পশ্চিমবঙ্গের খবর জানি, অনেক মানুষকে নানা কার্ডের প্রলোভন দিয়ে সরকার চাপের মধ্যে রাখে। গরীব হলেও সে ঠিকমতো সরকারি সহায়তা পায় না, যদি না তাকে সরকার দলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করে। এসব কার্ডের কারণ হিসেবে একদিকে শৃ্ঙ্খলা দেখানো হলেও পরোক্ষভাবে শাসনক্ষমতা দৃঢ় করাই এসব কার্ডের উদ্দেশ্য। 

ঙ। সরকার দ্রব্যমূলের ‍বৃদ্ধি নিয়ে কোনো কথা বলছে না। বরং জনগণকে উপহাস করছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নাকি ৩গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনপ্রতি আয় সীমা বেড়েছে। এসব বলে বরং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে একধরনের সমর্থন জানানো হচ্ছে। আবার টিসিবি কার্ড করে কিছু মানুষকে সুবিধা দিয়ে, তাদের মুখ বন্ধ করে বাকী সমস্ত মানুষকে দ্রব্যমূল্যের কঠিন বেড়াজালে আটকে ফেলা হবে। 

আমরা সরকারের আকুল আবেদন জানাবো, এসব কার্ডের বেড়াজালে আমাদের ফেলে আর স্থায়ী গোলাম বানাবেন না। সকলের জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখার উদ্যোগ নিন। এভাবে যতই বিভাজন করা হবে, তাতে সরকারের লাভ হলেও জনমনে অশান্তি ও অসন্তোষ বাড়তেই থাকবে। 

লেখক : জেনারেল সেক্রেটারি,বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট-বিআইএম