| |
               

মূল পাতা ইসলাম জুমার বয়ান ‘মেরাজের অন্যতম শিক্ষনীয় বিষয় খারাপ কাজ পরিহার করা’


‘মেরাজের অন্যতম শিক্ষনীয় বিষয় খারাপ কাজ পরিহার করা’


রহমত ডেস্ক     25 February, 2022     05:34 PM    


বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম বলেছেন, মি’রাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনটি বস্তুু প্রদান করা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সলাত সূরা বাক্বারাহর শেষ আয়াতগুলি ২৮৫-২৮৬ আয়াত। উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদেরকে ক্ষমা করার সুসংবাদ। (মুসলিম, মিশকাত হা ৫৮৬৫)। তাছাড়া মেরাজের অন্যতম শিক্ষনীয় বিষয় হলো খারাপকাজ পরিহার করা এবং ভালো কাজ বেশি করে করা। তাইতো মেরাজের রজনীতে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে মহান রব্বুল আলামীন বললেন হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কি নিয়ে মালা এ আলায় আলোচনা হচ্ছে? আমি বললাম হ্যাঁ, গুনাহের কাফফারা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করাও কাফফারা, জামাতে পায়ে হেঁটে যাওয়া, কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে উযূ করাও কাফফারা। যে ব্যক্তি এই কাজ করবে তার জীবন হবে কল্যাণময়, আর মৃত্যুও হবে কল্যাণময়। যেই দিন তাঁর মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন গুনাহর ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থা হবে সেই দিনের মত। আমার রব বললেন হে মুহাম্মাদ! সালাত (নামায) শেষে বলবেন হে আল্লাহ্! আপনার কাছে আমি যাঞ্ছা করি ভাল কাজ করা এবং মন্দ কাজ পরিত্যাগের, দরিদ্রদের প্রতি ভালবাসা পোষণের তওফীক। আপনি যখন বান্দাদের বিষয়ে ফেতনা মুসীবতের ইরাদা করবেন তখন আমাকে যেন ফেতনা মুক্ত অবস্থায় উঠায়ে নেন। নবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন (মালা-এ-আ’লায় আরো আলোচনা হচ্ছে) উচ্চ মর্যদা লাভের বিষয়ে। তা হল, সালামের প্রসার সাধন, আহার প্রদান এবং লোকেরা যখন নিদ্রাভিভূত তখন রাতের নফল সালাতে (তাহাজ্জুদে) নিমগ্ন হওয়া। (তিরমিজী হাদিস নম্বর ৩২৩৩)। আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

পেশ ইমাম বলেন, পবিত্র শবে মেরাজের ঘটনা থেকে মুমিন খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা লাভ করে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও দ্বীনের অবিচলতা। মেরাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা প্রিয় রাসূলকে যে মর্যাদা দান করেছেন যা অন্য কোনো নবীকে দান করেনি। এ ঘটনার ফলে মুমিনের ঈমান মজবুত হয় এবং হৃদয়ে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা সুগভীর হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজ থেকে ফিরে এসে সূরা বনি ইসরাইলের মাধ্যমে ১৪টি বিষয় উম্মতের সামনে পেশ করেছেন, তা’ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই বন্দেগি করো, মা বাবার সাথে উত্তম ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাদের সাথে উহ শব্দটিও বলো না। তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বলো। আর তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে বিনয়ী থেকো আর বলো ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন শৈশবে তারা আমাদের লালন পালন করেছেন,’ তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের মনের খবর জানেন।  আত্মীয় স্বজনকে তাদের হক দান কর আর অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের হক আদায় কর। অপব্যয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই, আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। হকদারদের হক আদায়ে অপারগ হলে তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো। একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না আবার একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। কারণ তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহাপাপ। জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটি নিকৃষ্ট কাজ ও মন্দ পথ। কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা কোরো না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি এই অধিকার দিয়েছি, তবে সে যেন প্রতিশোধের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে। এতিমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না। সম্পদের ব্যাপারে তার বয়োপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করো আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওজনে কখনো কম দিয়ো না। সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিনাম শুভ। যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেগুলোর পেছনে লেগো না। নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। পৃথিবীতে দম্ভভরে চলো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমান হতে পারবে না। এগুলো সবই মন্দ ও ঘৃণিত কাজ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-৩৮)।

তিনি আরো বলেন,মেরাজের রজনীতে জান্নাত জাহান্নামের বিভিন্ন দৃশ্য দেখার একপর্যায়ে এমন এক দল লোকের পাশ দিয়ে নবীজী গমন করেছিলেন। হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন মে’রাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখম-লে ও বুকে আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল ! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো অর্থাৎ, মানুষের গীবত করত এবং মানুষের ইজ্জতের উপর হামলা করত।” এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো ।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৭৮। সুতরাং গীবত পরিহার করাও মেরাজের শিক্ষা ৷রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম বহু হাদীসে গীবতের ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন ইরশাদ হয়েছে “গীবত করা যিনা থেকেও মারাত্মক।” (মেশকাত, বায়হাকি)। অতএব বুঝা গেল যিনা করলে যে গুনাহ হয় এর চাইতে বেশি গুনাহ হয় গীবত করলে। অপর হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,‘সূদের (পাপের) ৭২টি দরজা বাস্তা রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম স্তর হচ্ছে স্বীয় মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া তুল্য পাপ এবং ঊর্ধ্বতম স্তর হ’ল কোন ব্যক্তি তার এক ভাইয়ের মান-সমভ্রমের হানি ঘটান তুল্য পাপ’। (তাবারাণী; সিলসিলা ছহীহাহ হা ১৮৭১) । পবিত্র মাহে রমজান সন্নিকটে। রমজানের প্রাক্কালে মিরাজের তাৎপর্য ও শিক্ষা গ্রহণ করে আমারা রমজানের প্রস্তুতিকে আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করি। তাই আসুন, মিরাজের শিক্ষাকে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করি, অন্যকে বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানাই। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমিন।