| |
               

মূল পাতা জাতীয় অর্থনীতির চক্রাকার রূপান্তর না হলে রপ্তানি হুমকিতে পড়তে পারে


অর্থনীতির চক্রাকার রূপান্তর না হলে রপ্তানি হুমকিতে পড়তে পারে


রহমত নিউজ     05 December, 2023     11:14 PM    


দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ভবিষ্যতে বজায় রাখতে হলে আনুষ্ঠানিকভাবে চক্রাকার বা সার্কুলার অর্থনীতির চর্চা শুরু করা প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিভিন্ন ক্রেতা দেশ ও প্রতিষ্ঠানের পরিবেশসংক্রান্ত শর্ত পরিপালন করে সার্কুলার অর্থনীতির রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যেতে হবে, তা না হলে ভবিষ্যতে রপ্তানি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে পারে।

বাংলাদেশে বস্ত্র খাতে চক্রাকার নীতি সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস ও জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো) যৌথ এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।  এতে সহযোগিতা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন চ্যাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো প্যাট্রিক শ্রোয়েডার, ইউনিডোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জাকি উজ জামান, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের গ্রিন ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট–বিষয়ক টিম লিডার এডউইন কোয়েককোয়েক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ, বিজিএমইএর পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশের কারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নিয়ে উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থায় যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে চক্রাকার অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। পরিবেশের ঝুঁকি কমাতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শর্ত মেনে আমাদের অর্থনীতিকে চক্রাকার রূপান্তরের পথে যেতে হবে। এ জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তিসহায়তা প্রদানের পাশাপাশি চক্রাকার অর্থনীতির সহায়ক কাঁচামাল, আমদানি, রপ্তানি, কর, শুল্কসহ বিভিন্ন নীতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে।

চ্যাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো প্যাট্রিক শ্রোয়েডার বলেন, বাংলাদেশে চক্রাকার অর্থনীতি বাস্তবায়নে চারটি নীতিগত দিকে কাজ করা যেতে পারে। প্রথমত, বর্তমানে কারখানায় ঝুট বর্জ্য পৃথক করা ও সংগ্রহের বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। এ ক্ষেত্রে তথ্যের অনেক অস্বচ্ছতা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বর্জ্য সংগ্রহের অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে অর্থায়ন সুবিধা নেই। এ খাতে শ্রমিকেরা, বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা সস্তা শ্রম দেওয়ার মাধ্যমে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তৃতীয়ত, সরবরাহ শৃঙ্খলের বিভিন্ন স্তরে বর্জ্যের দামে স্বচ্ছতা নেই। এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নেই এবং বর্তমান করকাঠামোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রণোদনার ব্যবস্থাও নেই। চতুর্থত, স্থানীয় পর্যায়ে ঝুটপণ্য প্রক্রিয়াজাতকে উৎসাহ দিতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা ও রপ্তানিকে নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ঝুটপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আলাদা এইচএস কোড নির্ধারণ প্রয়োজন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রপ্তানির হিসাব থাকবে, অর্থ পাচারের সুযোগ কমবে এবং শৃঙ্খলা আসবে।

বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে চক্রাকার অর্থনীতি বাস্তবায়নে সরকারকে এ খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ও মুনাফা কমেছে। এ অবস্থায় উদ্যোক্তাদের পক্ষে চক্রাকার অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করা কঠিন কাজ। এ জন্য সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বিজিএমইএর পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান বলেন, পণ্যের নকশা ও উৎপাদন থেকে শুরু করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিটি পর্যায়ে অংশীজনদের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নীতি, প্রণোদনা বা শাস্তির ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বর্জ্য সংগ্রহের বড় অংশ এখনো অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। চক্রাকার অর্থনীতিকে কার্যকর করতে হলে এসব জটিলতা কমিয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে।

চক্রাকার অর্থনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও অর্থায়ন সুবিধা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান। তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারিতে নতুন রপ্তানি নীতি আসবে। সেখানে চক্রাকার অর্থনীতির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।