| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক ইউরোপ তাপমাত্রা বাড়ায় বিপাকে ইউরোপের অর্থনীতি


তাপমাত্রা বাড়ায় বিপাকে ইউরোপের অর্থনীতি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     14 September, 2023     09:28 AM    


চলতি বছরের গ্রীষ্মে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে ইউরোপে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা, দাবানল ও বন্যার কারণে চলতি বছর ইউরোপের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে ইউরোপীয় কমিশন। সিএনএন জানাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। তবে এই চাপ অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদও হতে পারে বলে বলছেন কর্মকর্তারা।

ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতি পোষাতে ইইউ অঞ্চলকে অনেক বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হবে। উচ্চ তাপমাত্রা, দাবানল ও বন্যার ফলে ইউরোপে প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি এই অঞ্চলের পর্যটন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

চলতি বছর ইইউর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, অথচ আগের পূর্বাভাস ছিল ১ শতাংশ। আগামী বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। জিডিপির প্রবৃদ্ধির সূচকের এই নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ হিসেবে দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নীতি সুদহার বৃদ্ধির পাশাপাশি চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ও জলবায়ুকেও দায়ী করছে সংস্থাটি।

ইউরোপের অনেক দেশেই মোট জিডিপির পাঁচ ভাগের এক অংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। ২০২২ সাল ছিল ইউরোপের ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। এ বছরও দক্ষিণ ইউরোপের তাপমাত্রা অনেক বেশি। সে কারণে ইতিমধ্যেই ইউরোপীয়রা ভাবতে শুরু করেছে, ভবিষ্যতে তারা কোথায় ছুটি কাটাবে।

ইউরোপীয় পর্যটন সংস্থাগুলোর জোট ইউরোপীয় ভ্রমণ কমিশন (ইটিসি) বলেছে, চলতি বছর গ্রীষ্ম ও শরত্কালে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে পর্যটক আসার হার ২০২২ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ কমেছে। এদিকে চেক প্রজাতন্ত্র, বুলগেরিয়া, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক; অর্থাৎ যেসব দেশে সারা বছরই তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে, পর্যটকদের কাছে সেই সব অঞ্চলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলে জানিয়েছে ইটিসি।

এ বছর ইতালি ও গ্রিসের মতো দেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের পর্যটকদেরও ভ্রমণে আসার হার কমেছে। কারণ, দুটি দেশই বর্তমানে দাবানলের সঙ্গে লড়াই করছে। ভ্রমণবিষয়ক কোম্পানি ফরওয়ার্ডকিজের মুখপাত্র গত জুলাই মাসে সিএনএনকে জানিয়েছেন, দাবদাহের কারণে যুক্তরাজ্যের পর্যটকেরা ইতালি বা গ্রিসে না গিয়ে ইউরোপের শীতল অঞ্চল বা উত্তরের দিকে বেশি যাচ্ছেন।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পর্যটন অন্যদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তা হলো তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রসৈকতের ভাঙন এবং দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়বে। ইউরোপে আসা পর্যটকদের কাছে সৈকত ও বন উভয়ই আকর্ষণীয়। স্বাভাবিকভাবে তাই পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালি অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে গত বছর সতর্ক করেছিল দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে দেশটির পর্যটন ও কৃষি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে তারা জানিয়েছিল।

উচ্চ তাপমাত্রা ইউরোপের জলপাইশিল্পের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে জলপাই তেলের উৎপাদন কমে গিয়ে দাম বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম জলপাই তেল উৎপাদনকারী দেশ স্পেনে জলপাইয়ের উৎপাদন কমেছে। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এই শিল্প চলতি বছর ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়বে, তা অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ফসল তোলার আগপর্যন্ত জানা যাবে না। তবে বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কাইল হল্যান্ডের মতে, এ বছর জলপাই তেলের উৎপাদন ৭ লাখ মেট্রিক টন কমে যেতে পারে। গত পাঁচ বছরের গড় উৎপাদনের নিরিখে তা ৩০ শতাংশের বেশি।

এদিকে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে নির্মাণ ও উৎপাদন খাতও ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাঁরা মনে করেন, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অংশে যদি কয়েক দিনের জন্য তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায়, তাহলে মানুষের কাজকর্ম ব্যাহত হবে; স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। রবিবার জলবায়ু পরিবর্তনকে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য গুরুতর ঝুঁকি বলে অভিহিত করেছে ইউরোপীয় কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠনের যে অঙ্গীকার জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলো করেছে, কথা রেখে এ ব্যাপারে তাদের নজির স্থাপন করতে হবে। দেশগুলোর উচিত হবে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব করে তোলা। সে জন্য করব্যবস্থার সংস্কার, সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা, রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্থানীয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার প্রয়োজন।