| |
               

মূল পাতা আরো পাঠকের কলাম ব্যর্থতা মানে 'সব শেষ' নয়!


ব্যর্থতা মানে 'সব শেষ' নয়!


মাওলানা রাদ তানবীর     06 March, 2023     03:39 PM    


আমরা প্রায় সবাই বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখি। উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পথ চলি। বড় হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে শৈশব কাটিয়ে প্রবেশ করি কৈশরে, কৈশর থেকে যৌবনে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টাও করি যার যার স্থান থেকে যথাসাধ্য। কিন্তু সবার পক্ষে সম্ভব হয় না সফলতার শীর্ষচূড়া অর্জন করা। সম্ভব হয় না লালিত স্বপ্নকে বাস্তবতার মোড়কে বন্দি করা। কেউ কেউ সফল হই। উল্লাস করি সানন্দে। আর কতক ব্যর্থ হই। হতাশ হয়ে অশ্রুবিন্দু বিসর্জন দেই নীরবে! হয়ত অনেকে আবার ব্যর্থতার পর নতুন করে উঠে দাঁড়াই। নতুন করে স্বপ্ন সাজাই। আবার চেষ্টা করি স্বপ্ন পূরণের। কিন্তু কেউ কেউ সেই ব্যর্থতাকেই ভেবে বসি চূড়ান্ত ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার পরই জীবনকে মনে করি নিরর্থক। বেঁচে থাকাকে মনে করি অর্থহীন ও লাঞ্ছনাকর।

আচ্ছা, মনে করো তুমি একটি বাগান করবে বলে স্থির করেছো। কী কী বৃক্ষ থাকবে বাগানে তাও নির্ধারণ করেছো। গোলাপ, বেলী, সূর্যমুখী আরো কত কী! মনে মনে চিত্রও এঁকেছো বাগানের একটি শাখায় স্নিগ্ধ বাতাসে দুলছে একটি প্রস্ফুটিত গোলাপ, গোলাপটির পাপড়িতে চুম্বনরত একটি প্রজাপতি। বাতাসে গোলাপের সাথে সাথে দুলছে প্রজাপতিটিও। নানান বর্ণের উপস্থিতি প্রজাপতিটির ডানাদ্বয়ে! তুমি বাগানটির একপাশে দণ্ডায়মান। সদ্য প্রকাশিত গোলাপের ঘ্রাণ বিমোহিত করছে তোমাকে! এতক্ষণ ছিল কল্পনা বা প্ল্যান। এরপর সত্যিই তুমি একটি বাগান করেছো। অনেক শ্রম ও সময় দিয়েছো বাগানটির পিছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছো না। বাগানটির বৃক্ষ বা পুষ্প সংরক্ষণ করতে পারছো না। কেন যেন মারা যাচ্ছে বৃক্ষগুলি। অথবা বৃক্ষ আছে কিন্তু ফুল নেই। ফল নেই। দীর্ঘ দিনেও একটি ফুল আসেনি কোন বৃক্ষশাখায়। ফল আসেনি কোনো ডালায়। এবার তুমি হতাশ হয়ে পড়লে। এক এক করে সবকটি গাছ কেটে ফেললে। বাগানে আর একটিও গাছ নেই। তুমি এখন পূর্ণ হতাশ। তোমার এতদিনের লালিত স্বপ্ন, শক্তি, শ্রম ও সময় সবগুলোই ফলশূন্য রয়ে গেল। এমনকি আর কখনও কোনো বৃক্ষ না রোপনের সিদ্ধান্তে অঙ্গিকার করে ফেলেছো! যদি এমনটিই করে থাকো তাহলে সত্যিই তুমি আর পারবে না। কারণ তুমি হতাশ হয়ে পড়েছো। নিজের মধ্যে থাকা সম্ভাবনাকে মূল্যায়ন না করে তুমি সাময়িক ব্যর্থতাকেই 'সবকিছু শেষ' ভেবে বসেছো। "তোমার দ্বারা এসব হবেনা" বলে নিজ সত্ত্বার প্রতি অন্যায় করেছো। নিজের মধ্যে সুপ্ত থাকা মুক্তোগুলোকে ছুঁড়ে ফেলেছো অনস্তিত্বের দিকে জোর করে। 

অথচ তোমার উচিৎ ছিল আরেকটি বাগান তৈরী। নতুন করে নতুন নতুন বৃক্ষে আরেকটি উদ্যান সাজানো। হয়ত সেখানে ফোটতো অগণিত পুষ্পকলি। ডালে ডালে ভরে উঠতো লাল, নীল, হলুদ ফুলে! প্রতিটি ডাল নুয়ে যেত রসালো ফলের ভারে। প্রজাপতিরাও বসতো ফুলের পাপড়ীতে। বিহঙ্গরাও গান করত ঘন সবুজের মাঝে লুকিয়ে! কী চমৎকার দৃশ্যটাই না হত তখন! নিশ্চয় আনন্দে নেচে উঠতো তখন তোমার দেহমনের সবক'টি শিরা ও উপশিরা। কাজেই বাগান থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে বাগানকে কেটে শেষ করে দেওয়া অথবা আর কখনও গাছ রোপণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কিছুতেই সুবুদ্ধি নয়। একটিবারের ব্যর্থতার কারণে আগামীর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া কিছুতেই সঠিক চিন্তা হতে পারে না।

জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও একই কথা। সেখানেও আমাদের হতাশ হওয়া চলবেনা। হতাশ হতে নিষেধ করেছেন আল্লাহ তায়ালাও। তিনি বলেন, 
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ، إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
অনুবাদ: (হে নবী!) আপনি বলে দিন, হে আমার ঐ সমস্ত বান্দারা যারা অবিচার করেছো নিজেদের প্রতি! তোমরা আল্লাহর রহমতের আশা হারিয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা সকল পাপ মাফ করে দিবেন। নিঃসন্দেহে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও চিরদয়ালু। (সূরা যুমার: ৫৩)
হযরত ইয়াকুব (আ:) আপন পুত্রদ্বয় হযরত ইউসুফ (আ:) ও বিন ইয়ামিনের সন্ধানে অন্য পুত্রদেরকে এই বলে পাঠিয়েছিলেন, (কুরআনের ভাষায়):
يا بني اذهبوا فتحسسوا من يوسف و أخيه و لا تيأسوا من روح الله ....!
অনুবাদ: হে আমার পুত্ররা! তোমরা গিয়ে ইউসুফ আর তার ভাইয়ের সন্ধান লও আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। (সূরা ইউসুফ: ৮৭)
ছোটবেলায় শুনে আসা কবিতার সেই চরণগুলিও স্মরণ করতে পারি এক্ষেত্রে,  "পারিবো না পারিবো না একথাটি বলিও না আর, একবার না পারিলে দেখো শতবার"! কবি বেশ বলেছেন এখানে! এটিই আমাদের উন্নতির পথে সহায়িকা হতে পারে। তাছাড়া অবশ্যই ভাগ্যলিপির কথা স্মরণ রাখতে হবে। প্রতিটি মানুষেরই ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়ে আছে সৃষ্টির সূচনা থেকে পবিত্র কলমে। আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটছে সবকিছুই তাকদীর অনুযায়ী ঘটছে। একচুলও এদিক সেদিক হচ্ছে না তাকদীরের নির্ধারণ থেকে। তাকদীর ও ভাগ্যলিপির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনও আমাদের হতাশা কাটাতে বড় সহায়িকা হবে বলে আশা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুন।