| |
               

মূল পাতা জাতীয় তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের ৩ দাবি ও ২ কর্মসূচি ঘোষণা


তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের ৩ দাবি ও ২ কর্মসূচি ঘোষণা


রহমত নিউজ ডেস্ক     04 March, 2023     12:20 AM    


পঞ্চগড়ে অমুসলিম কাদিয়ানিদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিরীহ মুসলমানদের উপর বর্বরোচিত হামলা, হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে ৩ দাবি ২ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

দবিসূমহ : ১.কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করে তাদের যাবতীয় বইপুস্তক, লিটারেচার, লিফলেট, পাক্ষিক, মাসিক পত্র-পত্রিকা মুদ্রন, প্রচার, সংরক্ষণ, বিতরণ ও সভা সমাবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। ২. হামলা ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৩. নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. গতকালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঈমানী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কাউকে মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানি করা যাবে না।

কর্মসূচি : ১. আগামী শুক্রবার দেশব্যাপী সকল মসজিদে আক্বিদায়ে খতমে নবুওয়তের উপর আলোচনা করা এবং শহীদ আরিফুজ্জামানসহ আহত সকলের জন্য বিশেষ দু'আ। ২. দ্রুত সময়ে উপরোক্ত দাবি সমূহ বাস্তবায়ন না করলে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

শনিবার (৪ মার্চ) রাজধানী খিলগাঁওস্থ মাখজানুল উলূম মাদরাসা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সহ সভাপতি মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা জহুরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মুফতী মাসউদুল করীম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা এনামুল হক মুসা, প্রচার সম্পাদক মাওলানা রাশেদ বিন নূর, দপ্তর সম্পাদক মুফতী আল আমীন ফয়জী, সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, নেতা মুফতী রুহুল আমীন বাহাদুরপুরী, মুফতী যুবায়ের রশীদ, মাওলানা সাঈদুল ইসলাম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা ইসহাক, মাওলানা নাসির উদ্দীন, মাওলানা মেরাজুল ইসলাম, মাওলানা ইউনুস কাসেমী প্রমূখ।

খতমে নবুওয়তের আক্বিদা ও বিশ্বাস মুসলমানদের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র মানব জাতীর জন্য সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর নবুওয়তের সার্বভৌমত্ত্ব কোন কালেই খর্ব হবে না। আল্লাহর তরফ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত নতুন কোন নবীর আবির্ভাব হবে না। এ বিশ্বাস যে কোন ব্যক্তির পক্ষে নিজেকে মুসলমান রূপে পরিচিত করার জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত। কেউ এ শর্ত অমান্য করলে, এমনকি যে কোন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে প্রিয় নবিজী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়তের মধ্যে সামান্যতম ভাগ বসানোর অপপ্রয়াস চালালে সে নিজেকে মুসলিম দাবী করতে পারে না। সে মুসলমান নয়। প্রিয় নবিজী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এই সুস্পষ্ট বিশ্বাস ও আনুগত্যই মুসলিম জাতির অস্তিত্ব রক্ষার চাবিকাঠি। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংরেজ বেনিয়ারা তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে তাদেরই সার্বিক সহযোগীতায় মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নামক এক ভন্ড প্রতারককে নবী দাবি করার প্ররোচিত করে দেয়। তখন সে নিজেকে নবী বলে দাবি করে কিছু মনগড়া ভ্রান্ত আক্বিদার সমন্বয়ে এক নতুন ধর্মমতের গোড়াপত্ত্বন করে এবং এই মনগড়া ধর্মকে ইসলাম ও তার অনুসারীদেরকে আহমদিয়া মুসলিম নাম দেয়।

আপনাদের অবগতির জন্য মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র “রূহানী খাযায়েন” নামক পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি সহকারে ৭২টি ভ্রান্ত দাবীসমূহ হতে নিম্নে কয়েকটি দাবী তুলে ধরছি; ১. আমি রাসূল – খন্ড ১৮, পৃষ্ঠা ২৩১। ২. আমি খাতিমুল আম্বিয়া – খন্ড ১৮, পৃষ্ঠা ২১২। ৩. আমি শরীয়তধারী নবী – খন্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৪৩৫। ৪. আমি সকল নবী হতে শ্রেষ্ঠ – খন্ড ২২, পৃষ্ঠা ৫৭৪। ৫. আমি আঁ হযরত (সা.) হতে শ্রেষ্ঠ – খন্ড ১৯, পৃষ্ঠা ১৮৩। ৬. আমি খোদার অনুরূপ – খন্ড ১৭, পৃষ্ঠা ১৫৮। ৭. আমি খোদার প্রতিচ্ছবি – খন্ড ২২, পৃষ্ঠা ১৫৮। কুরআনের শতাধিক আয়াত এবং আড়াই শতাধিক হাদিসের মাধ্যমে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী এবং তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই তা সু-প্রমানিত। অজস্র আয়াত ও সহীহ হাদিস দ্বারা দ্যার্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আখেরী ও সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী আগমণ করবেন না। পূর্ববর্তী সালফে সালেহীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন সহ, বিশ্বের সকল হকপন্থী আলেম-উলামা, মুফতিয়ানে কেরাম ও পীর মাশায়েখদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত, কাদিয়ানি মতবাদ একটি কুফুরি মতবাদ। এই মতের অনুসারীগন মুসলিম নয়। শুধু তাই নয়, যদি কোনো মুসলিম ব্যক্তি কাদিয়ানীদের কাফের হওয়ার বিষয়ে বিন্দু মাত্র সন্দেহ পোষণ করে, তিনিও কাফের হয়ে যাবেন।যুগেযুগে মুসাইলামা কাজ্জাব, তুলাইহা, আসওয়াদ আনাসীর মত অনেক ভন্ড ও মিথ্যাবাদীর উদ্ভব হয়েছে। মুসলিম উম্মাহ এদের সকল অপ্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করেছে। তারই ধারাবহিকতায় মিথ্যা নবী দাবিদার মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকেও প্রত্যাখ্যান করেছে।

১৯৫৭ সনে সিরিয়া সরকার, ১৯৫৮ মিশর সরকার, ১৯৭৪ সনে পাকিস্তান সরকার, ১৯৭৩ সনে আযাদ কাশ্মীরের এসেম্বিলী কাদিয়ানীদের অমুসলিম ও কাফের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশ কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাাবে কাফের ঘোষণা করেছে। ১৯৭৪ ইং রাবেতায়ে আলমে ইসলামি এর অন্তর্ভুক্ত ১০৪ টি দেশের প্রতিনিধি সম্মেলনের সিদ্ধান্তে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ও সংখ্যালঘু হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিগত ১৯৯৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেছে যে, ‘আইনের দৃষ্টিতে কাদিয়ানী সম্প্রদায় অমুসলিম ও কাফের’। বিচারপতি আব্দুল জলিল ও বিচারপতি ফজলুল করিম এর যৌথ ব্র্যাঞ্চ হতে এই রায় ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া বাগদাদে অনুষ্ঠিত ও.আই.সির সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষণা করা হয়। কাদিয়ানিরা অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের মুসলমান দাবি করে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে ঈমানহারা করছে। দেশের সংবিধানমতে কাদিয়ানিদের ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে। তাহলে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করার অধিকার কি নেই? স্বাধিনতার নামে ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় পরিভাষা ও রীতিনীতি চুরি করে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করার অধিকার দিতে হবে কি? আর এক্ষেত্রে মুসলমানগণ বাঁধা দিতে পারবে না? এটা কি দেশের সংবিধান সম্মত? দেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পোষাক পরে কেউ যদি চুরি ডাকাতি করে এটা কি তাদের সাংবিধানিক অধিকার? তাহলে কাদিয়ানিরা অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে ইসলাম ও মুসলমানদের পরিভাষা ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া সংবিধান বিরোধী নয় কি? এ জন্যই দেশের সর্বস্তরের মুসলমানগণ কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন ও সংগ্রাম করে আসছে।

গত ৩ মার্চ'২৩ ইং কাদিয়ানিরা অসাংবিধানিকভাবে মুসলমানদের পরিভাষা ব্যবহার করে তিন দিনব্যাপী সালানা জলসা করার উদ্যোগ নেয়। তাদের জলসা বন্ধ করার দাবিতে পঞ্চগড়ের সর্বস্তরের মুসলমানগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজপথে নেমে আসে। সেই ন্যায় সংগত প্রতিবাদী আন্দোলনে বিনা উস্কানিতে নিরীহ মুসলমানদের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্বরোচিত হামলা চালায়। এতে আরিফুজ্জামান নামে একজন মুসলিম যুবক ঘটনাস্থলে শাহাদাত বরণ করে, আহত হয় শতাধিক। এদের মাঝে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। প্রশাসনের অহেতুক, অযাচিত হামলা ও গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আজকের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে দেশবাসীর নিকট শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশেষ আহবান জানানো হচ্ছে।