| |
               

মূল পাতা ইসলাম রাসুলুল্লাহর উত্তম চরিত্র ও আদর্শের মাধ্যমেই ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে


রাসুলুল্লাহর উত্তম চরিত্র ও আদর্শের মাধ্যমেই ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে


মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান     29 November, 2022     01:17 PM    


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খুলুকে আজীম তথা মহান চরিত্রের মাধুর্যতা ই মক্কার আইয়্যামে জাহেলিয়াত তথা অন্ধকার যুগের মানুষ গুলোকে ইসলামের ছায়াতলে আনতে ও বিশ্বব্যাপী ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে। ইসলাম জোরজবরদস্তিতে বিশ্বাস করেনা বলেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীমাহীন নির্যাতন নিপিড়ন ভোগ করার পর ও এর কোনো প্রতিশোধ না নিয়ে উত্তম আদর্শের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করেছেন।

মুশরিকদের অত্যাচারে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছাড়তে হয়েছে, ওহুদ যুদ্ধে তার দান্দান (দাত) মোবারক শহীদ হয়েছে, দুশমনদের আঘাতে তার সারা দেহ রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে রইলো, সাহাবায়েকেরাম তার এই কষ্ট দেখে কাফেরদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করার অনুরোধ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি বদদোয়া দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়নি, আমি আগমন করেছি বিশ্ববাসীর সামগ্রিক কল্যাণের উজ্জ্বল প্রতীকরুপে। দ্বীনের দাওয়াত দিতে যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফ গমন করেন ইসলামের দুশমনরা তার উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে। আঘাতে আঘাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহ মোবারক হয়েছে ক্ষতবিক্ষত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই অবস্থা দেখে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের মাধ্যমে এ প্রস্তাব দিলেন যে, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি অনুমতি দান করেন তাহলে দুদিকের পাহাড় একত্র করে এই বেঈমানদের নিশ্চিহ্ন করে দেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফেরেশতাদেরকে বললেন, না, এদেরকে শাস্তি দিওনা। এরা আমাকে চিনতে পারেনি। হয়তে পারে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কালেমা পড়ে একদিন মুসলমান হয়ে যাবে। নিজে এতো নির্যাতন নিপিড়ন সহ্য করে ও কোনো প্রকারের প্রতিশোধ গ্রহণ না করে বরং নির্যাতনকারীদের কল্যাণ কামনা করেছেন। কিন্তু এতটা নির্যাতনের শিকার হয়ে ও পরবর্তীতে কিভাবে তিনি ইসলামের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন? এর উত্তর হলো আদর্শের মাধ্যমে। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের সাফল্যে তার উত্তম মাধুর্য চরিত্র ও আদর্শ ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তার মাধুর্য চরিত্র ও আদর্শ নিঃসন্দেহে মানুষদের ইসলাম গ্রহণে উদ্ভুদ্ধ করেছে।

রাসুলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্রের প্রশংসা করতে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে এরশাদ করে বলেন, হে রাসুল! নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। ( সূরা ক্বলম, আয়াত ৪)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তম আদর্শের মাধ্যমেই কাফের, মুশরিকদের ইসলামের দিকে আহবান করেছেন।

একদিন প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন জঙ্গল থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে এক বৃদ্ধা মাথায় করে নিয়ে আসছে। বোঝার ভারে বৃদ্ধার খুব কষ্ট হচ্ছে। বৃদ্ধার কষ্ট দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মা, বোঝাটি আমার কাধে তুলে দাও, তুমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বৃদ্ধা তখন তার বোঝাটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাধে তুলে দিলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে বোঝাটি নিজ কাধে বহন করে বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে দিল। ফিরে আসার সময় বৃদ্ধা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু আপ্যায়ন করতে চাইলেও তার বাড়িতে খাবারের কিছুই ছিলোনা। বৃদ্ধা তখন আফসোস করে বললো আমার ঘরে যে কিছুই নেই যা দিয়ে তোমাকে আপ্যায়ন করতে পারি। কিন্তু বাবা, তোমাকে একটা উপদেশ দিচ্ছি, মক্কায় এক যুবক নিজেকে নবী দাবী করে তার নাম মোহাম্মদ। সে আমাদের পূর্ব পুরুষদের বিরোধিতা করে করে আসছে। তুমি যেহেতু খুব ভালো মানুষ, আমাকে অনেক উপকার করেছ তাই তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি এ যুবকের কথায় তুমি কখনো কর্ণপাত করবেনা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃদ্ধার কথা শুনে বললেন মা, তোমার কথা কি শেষ? বৃদ্ধা বললো হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে যুবক সম্পর্কে আমাকে উপদেশ দিয়েছ আমিই সেই যুবক। আমার নাম ই মোহাম্মদ। আমিই এক আল্লাহর একাত্ববাদের দাওয়াত দেয়। বৃদ্ধা বললো, সত্যিই তুমি সেই যুবক? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। বৃদ্ধা তখন বললো যদি তাই হয় তাহলে আমি নিজে এখন কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে যাবো, তাড়াতাড়ি আমাকে কালেমা পড়িয়ে মুসলমান বানিয়ে দাও। এরপর বৃদ্ধা কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলো। এই বৃদ্ধাকে জোরজবরদস্তি করে মুসলমান বানানো হয়নি, বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তম চরিত্রও আদর্শ দেখে নিজ থেকেই ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।

রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীমাহীন আদর্শের মধ্যে অন্যতম এক আদর্শ হলো মানুষের সেবা করা। এই সেবার মাধ্যমেই ইসলামের দাওয়াতের মিশন চালু রাখা বর্তমান সময়ে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। আজ দ্বীনের দায়ীদের প্রয়োজন মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করা। সমাজের অসহায়,হতদরিদ্র, এতীম, বিধবা সহ পিছিয়েপড়া জনগনের প্রয়োজনে সর্বাত্তক তাদের পাশে দাড়ানো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত ও বটে। আজও যদি বিশ্ব মুসলিম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তম চরিত্র আর আদর্শ গ্রহণ করে জীবন যাপন করে তাহলে বিশ্বের বুকে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হতে বাধ্য।

লেখক : নাজিমে দারুল ইকামাহ, জামিয়া কোরআনিয়া সৈয়দা সৈয়দুন্নেছা ও কারিগরি শিক্ষালয় কাজীপাড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া