| |
               

মূল পাতা ইসলাম অল্প অল্প করে চেষ্টা করলে পাপ ছেড়ে দেওয়া সহজ


অল্প অল্প করে চেষ্টা করলে পাপ ছেড়ে দেওয়া সহজ


মাওলানা রাদ তানবীর     21 October, 2022     07:09 AM    


যে কোনো বিষয় অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে তা হঠাৎ করে ছেড়ে দেওয়া খুব কঠিন। অসম্ভবও বটে। অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাওয়া কোনো বৈশিষ্ট্য বা আচরণকে অল্প সময়ে পরিপূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা সহজসাধ্য নয়। তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের। একসাথে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে প্রয়োজন অল্প অল্প করে চেষ্টা করে যাওয়া। এভাবে চেষ্টা করে গেলে কোনো একদিন অভ্যাসটা নিশ্চয় কেটে যাবে। অভ্যাসে পরিণত হওয়া বিষয়টার উপস্থিতি তখন শূন্যতে নেমে আসবে। অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত ফল। হস্তগত হবে সফলতা ও সহজতা।

ঠিক তেমনই পাপ ও অন্যায়ের বিষয়টি। আমরা অনেকেই পাপ বা অন্যায় করতে করতে তার গভীরতায় পৌঁছে গিয়েছি। কোনো গুনাহে বারবার লিপ্ত হয়ে সেই গুনাহকে করে ফেলেছি অভ্যাসে পরিণত। ধর্মীয় বিধিনীতি লঙ্ঘন করতে করতে পৌঁছে গিয়েছি অনেকেই ধর্ম থেকে চূড়ান্ত দূরত্বে। আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতাকে আলিঙ্গন করে চলছি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধকে করছি না একটু তোয়াক্কা। মানছি না তাঁর পথনির্দেশ। এখন পাপ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা করেও ছাড়তে পারছিনা বা অতীত পাপের ভয়াবহতা দেখে ভাবছি আমি আল্লাহর রহমত পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি। ভাবছি, আমার পক্ষে আর প্রভুর প্রিয়পাত্রে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়। অনেকেই পাপ ও গুনাহ পূর্ণভাবে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। পারিনি প্রভুর বিধিনিষেধে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতে। তাই বলে কি থেমে যাবো? থামিয়ে দেবো চেষ্টা? ছাড়তে হবে না আমাদের সেই ভুলগুলো? সেই পাপগুলো? অবশ্যই। অবশ্যই এই মন্দ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে হবে। ছাড়তে হবে পাপগুলো। গুনাহপ্রীতি ছেড়ে হৃদয়ে জাগাতে হবে পুণ্যের প্রতি ভালোবাসা। অন্যায় অভ্যাস বর্জন করে ধরতে হবে হক্বানিয়্যাতের পথ। 

তবে তা একদিনেই সম্ভব নয়। এখানেও প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের। চেষ্টা করতে হবে অল্প অল্প করে। একসাথে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে করতে হবে অল্প অল্প করে চেষ্টা। একদিনেই নিষ্পাপ হয়ে যাওয়ার ব্যর্থচেষ্টা না করে ধীরে ধীরে যেতে হবে পাপহীনতার দিকে। গুনাহগুলোকে পার্ট পার্ট করে সময় নিয়ে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে পাপমুক্তির দিকে। আপনি যদি দৈনিক ১০টি সিগারেট খান, তো আজই ১০টি সিগারেট ত্যাগ করতে পারবেন না। নিজের জন্য তা কষ্টকর মনে হবে‌। তাই ১০টি না ছেড়ে ১টিকে ছাড়ুন। আজ ৯টি খাবেন। প্রয়োজনে আগামীকালও ৯টি খান। এরপরের দিন খাবেন ৮টি। এরপরের দিন ৭টি। এভাবেই চেষ্টা চালান। দেখবেন, সিগারেটের প্রতি কিছুদিন পর আপনার আগের মত আর আকর্ষণ থাকবে না।

প্রতিদিন ৫টি সিনেমা দেখেন আপনি, তো আজ থেকে দেখুন ৪টি। দু'দিন পর একটি বাদ দিয়ে দেখুন ৩টি। এরপর কমিয়ে দেখুন ২টি। কিছুদিন পর সিনেমা বাদ দিয়ে দেখুন নাটক বা শিক্ষনীয় শর্টফিল্ম। সেগুলোতেও সংখ্যার হিসাব চলুক। দিনদিন সংখ্যা হ্রাস করুন। (ইনশাআল্লাহ) কিছুদিন পর এসবের প্রতি আপনার আর আসক্তিই থাকবেনা।

নামায কোনো ওয়াক্তেরই পড়েন না আপনি, তো আজ থেকে একবেলার নামায পড়তে শুরু করুন। আসরেরটা পড়ুন। কয়েকদিন পর আরও একবেলার শুরু করুন। মাগরিবেরটা পড়ুন। কিছুদিন পর আরও একবেলার। এভাবেই চেষ্টা চালান। দেখবেন একদিন (ইনশাআল্লাহ) আপনি পাঁচ ওয়াক্তের নামাযই পড়তে পারছেন!

প্রতিটি মন্দ কর্মের ক্ষেত্রে যদি এভাবে চেষ্টা চালান প্রতিনিয়ত, প্রতিটি অন্যায় ও গুনাহ ছাড়তে এভাবে যদি চেষ্টা করে যান নিয়মিত তাহলে আপনি সফল হবেনই। গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া আপনার জন্য সহজ হবেই। আজ না হোক, কাল। একমাসে না হোক, হবে একবছরে, ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তায়ালার রহমত ও দয়া প্রশস্ত। তাঁর ক্ষমাগুণ ব্যাপক। তিনি ক্ষমা করতে খুব ভালোবাসেন। বান্দাদের পাপগুলো মাফ করতে তিনি পরম আনন্দ পান। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 
والذي نفسي بيده لو لم تذنبوا لذهب الله بكم ولجاء بقوم يذنبون فيستغفرون الله تعالى فيغفر لهم 
(অনুবাদ): কসম ঐ সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তোমরা গুনাহ না করতে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে নিঃশেষ করে এমন এক জাতিকে নিয়ে আসতেন যারা গুনাহ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে এস্তেগফার করতো ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।
তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কিছুতেই কাম্য নয়। তিনি সবসময় প্রস্তুত রাখেন তাঁর রহমতের বারি। বান্দা তাওবা ও এস্তেগফার করলেই তিনি সেই বারি বর্ষণ করেন। গুনাহগার বান্দাকে তিনি পাপ থেকে পবিত্র করে আবৃত করেন রহমতের ভূষণে। যে দুনিয়ার সকলের কাছে ঘৃণার পাত্র থাকে তাকে তিনি পরিণত করেন প্রিয়পাত্রে তাওবা ও এস্তেগফারের কারণে। তাকে তিনি অন্তর্ভুক্ত করেন প্রিয়দের সারিতে, জান্নাতীদের সুফূফে। তিনি নিষেধ করেন নিরাশ হতে। কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, 
قل يعبادي الذين اسرفوا على انفسهم لا تقنطوا من رحمة الله ان الله يغفر الذنوب جميعا انه هو الغفور الرحيم (سورة الزمر:٥٣)
অনুবাদ: হে আমার ঐ বান্দারা যারা অন্যায় করেছো নিজেদের প্রতি, তোমরা নিরাশ হয়ো না আল্লাহর রহমত থেকে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও চিরদয়ালু। (সূরা যুমার:৫৩)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে পাপ থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। পাপের পথ ছেড়ে আলোর পথে চলার তাওফীক দান করুন।