| |
               

মূল পাতা ইসলাম রাগ ও গোস্বা দমন বীরত্বের প্রতীক


রাগ ও গোস্বা দমন বীরত্বের প্রতীক


মাওলানা রাদ তানবীর     22 August, 2022     07:58 AM    


আমরা রাগ করি। ক্রুদ্ধ হই। জীবনচলার পথে বিভিন্ন গলিতে ছোট বড় নানান কারণে আমরা রেগে যাই, সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত নেই। প্রিয় বন্ধুটিকে বর্জন করি। প্রিয় আত্মীয়কে দূরে ঠেলে দেই। নিকটতম মানুষটিকে মুছে ফেলি হৃদয় থেকে। ভুলে যাই তাদের অতীতের সব অনুগ্রহ ও সহমর্মিতা। কেউ কেউ তো ভালোবাসা ও ভালোলাগার বিপ্লব করে বর্ণিল আয়োজনে ঘরে তুলা প্রিয় জীবনসঙ্গীনিকেও পরিত্যাগের ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় এই রাগের ফলে। স্ত্রীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা সুখের সংসারটায় নিমিষেই নেমে আসে ঘন অমানিশা। একটি সাজানো সংসারের ঠোঁটে মুহূর্তেই লেগে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ইতিচিহ্ন।

রাগ বা গোস্বার ফল ও পরিণাম অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, যদিও এর সূচনা ঘটে খুব সহজে। এই রাগ বা গোস্বা পারে একজন ব্যাক্তির জীবন ধ্বংস করে দিতে, একটি পরিবারে অশান্তি এনে দিতে, সুশৃঙ্খল একটি সমাজের শৃঙ্খলা কেড়ে নিতে। এমনকি আত্মহত্যার মতো জঘন্য ও ভয়ঙ্কর কর্মেও নিক্ষেপ করতে সক্ষম এই রাগ, গোস্বা।

রাগ দমন করা অতি কষ্টের কিছু নয়। তবে তা দমনের সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত ত্যাগের। শীর্ষ ধৈর্যের অধিকারীরাই কেবল পারে রাগ দমনের সিদ্ধান্ত নিতে। রাগ দমনকারীদের প্রতিদানও কিন্তু কম নয়। কুরআনে তাদের প্রশংসা রয়েছে সুস্পষ্টভাবে৷ (অনুবাদ)তোমরা দ্রুত ধাবিত হও তোমাদের প্রভুর ক্ষমা আর জান্নাতের দিকে, যার বিস্তৃতি আকাশমণ্ডল আর পৃথিবী পরিমাণ। যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য, যারা দান করে সুখে, দুঃখে।যারা রাগ দমনে আনন্দিত হয়। ক্ষমা করে যারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন ইহসান ও সদ্ব্যবহারকারীদের। (সূরা আল ইমরান, আয়াত:১৪৩,১৪৪)

প্রিয় নবীর বাণীসমূহেও কী তাদের কম প্রসংশা আছে! সাহাল ইবনে মুআয (রা:) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি গোস্বার মৃত্য ঘটায় তা কার্যকর করার ক্ষমতা সত্ত্বেও, কেয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে আল্লাহ তায়ালা তাকে ডেকে তার ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতী হুর গ্রহণের অধিকার দান করবেন। (সুনানে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা:৬৫৯)
প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কুস্তিতে অপরাজিত ব্যক্তি প্রকৃত বাহাদুর নয়, প্রকৃত বাহাদুর সেই যে রাগের সময় নিজেকে সংযত করতে পারে। (সহীহ মুসলিম:২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা:৩২৬)

বাহ্ কী চমৎকার ঘোষণা! বন্ধুরা, এরপরও কি আমরা চেষ্টা করবো না রাগের মুহূর্তে রাগকে দমিয়ে রাখার? রাগ দমনকারির জন্য কুরআন ও হাদীসে ঘোষিত পুরস্কারগুলো অর্জন করার মানসে আমরা কী আজই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে পারি না ? আমরা কি পারি না রাগ দমনের বৈশিষ্ট্যকে জীবনে ও অভ্যাসে বাস্তবায়ন করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রিয় পাত্রে পরিণত হতে? আমরা ক্ষমা করে দিতে পারি না তাকে যার প্রতি আমাদের রাগ ও ক্রোধ জাগে? আমরা ইচ্ছা করলে অবশ্যই পারবো তা। এর মাধ্যমে আমরা বাঁচতেও পারবো অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি থেকে। বাঁচতে পারবো সম্পর্ক ছিন্ন ও সংসার ভঙ্গের কঠিন পরিণাম থেকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফীক দিন৷ আমীন৷