| |
               

মূল পাতা আরো পাঠকের কলাম চামড়া শিল্পে ক্ষতি কার; সরকারের নাকি কওমি মাদরাসার?


চামড়া শিল্পে ক্ষতি কার; সরকারের নাকি কওমি মাদরাসার?


মুফতী জসিম উদ্দীন     07 July, 2022     10:09 PM    


কয়েকদিন পরে আসছে মুসলমানদের ধর্মীয় বড় উৎসব ঈদুল আজহা। ধনী-গরীব সকলে মিলেমিশে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে উদযাপন করে। কিন্তু খারাফ লাগে, যখন দেখি সিন্ডিকেট ও কুচক্রদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশের চতুর্থতম বৃহৎশিল্প ‘চামড়া শিল্প’। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে কোরবানীর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে লাখ লাখ চামড়াকে মাটির নিচে পুতে ফেলতে। আবার এদেশে শুধু বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ট্যানারি মালিকরা বিদেশ থেকে আমদানি করেছে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার বিদেশি চামড়া।

খবরের কাগজে দেখেছি,আন্তর্জাতিক বাজারে প্রস্তুতকৃত চামড়ার দাম কমেছে, এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এবারো কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে দিল সরকার।।তবে গতবারের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। ফলে এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৭ টাকা থেকে ৫২ টাকা। ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা। এতিম ও গরীবের হক লুন্ঠন সর্বোপরি রাষ্ট্রের এই শিল্প ধ্বংস করার জন্য গত আট বছর ধরে একটি চক্র কাজ করে যাচ্ছে এবং সুকৌশলে প্রতি বৎসর চামড়ার দাম কমিয়ে দিচ্ছে।

একটি দৈনিক পত্রিকার ভাষ্যমতে, ২০১৩ সালের পর থেকে বিগত আট বছর গরুর চামড়ার দাম (প্রতি বর্গফুট ) জ্যামিতিক হারে কমেছে।যেখানে ২০১৩ সালের আগে প্রতি বর্গফুট চামড়া ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা সেখানে -২০১৪ সালে ৭৫-৮০, ২০১৫ সালে ৫০ এবং ২০১৬ সালে ৫০-৫৫, ও ২০১৭ সালে ৫০-৫৫ টাকা।আর ২০১৮ সালে ৪৫-৫০,২০১৯ সালে ৪৫-৫০,এবং ২০২০ সালে ৩৫-৪০ ও ২০২১ সালে ৪০-৪৫ টাকা।শুধু তাই নয়, এটি প্রভাব পড়ছে চামড়া রপ্তানি আয় খাতেও।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি তথ্য অনুযায়ী ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে চামড়া ,চামড়াজাত পণ্য ও চামড়া জুতার রপ্তানি আয় ছিল ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় ১১৬ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় নেমে আসে প্রায় ১০২ কোটি মার্কিন ডলারে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা আরো কমে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে নেমে আসে। সর্বশেষ ইপিবির তথ্যানুযায়ী ২০২০ - ২১ অর্থবছরে জুলাই –এপ্রিল (১০ মাস) সময়ে চামড়া রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার।চামড়া থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে এসেছে ২০ কোটি ৩১লাখ ডলার। আর চামড়া জুতা রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ডলার যা এযাবতকালের সবচেয়ে বেশী।

এদিকে দেশে বার্ষিক চাহিদার ৫০ শতাংশ চামড়া ঈদুল আজহায় সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা। এসব রাঘববোয়ালদের স্বার্থে চামড়ার দাম কমানোর পাশাপাশি চামড়া ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে সরকার। এই ঋণের পরিমাণ কয়েকশত কোটি টাকা। শুধু তাই নয় ,পরবর্তীতে এই ঋণ পরিশোধ না করার প্রতিযোগিতাও বাড়ছে ; যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

একথা সত্য যে, দেশে চামড়া সংগ্রহের কাজটি সিংহভাগ কওমী মাদরাসাগুলো আন্জাম দিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রাপ্য অর্থ দ্বারা গরীব ছাত্রদের ভরণ -পোষণের ব্যবস্থা করে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গঠনে ও দারিদ্রতা বিমোচনে ভূমিকা রাখছে। তাই ঐ চক্রটি মনে করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিলে মাদরাসাগুলো অর্থসংকটে পড়ে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।আর এতে চক্রটির স্বার্থসিদ্ধি হাসিল সহজ হয়ে যাবে। অথচ এই ধারণা ভুল। বৃটিশ ও চেষ্টা করে ছিল ,কিন্তু সফল হয়নি।বরং চামড়ার ক্ষেত্রে মাদরাসাগুলোর তুলনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করলে তা ৫বিলিয়ন ডলার তথা ৫০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।যা দারিদ্র বিমোচনে একধাপ এগিয়ে যাবে।যেহেতু সরকার ২০১৭ সালে চামড়া শিল্পকে ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং অথনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮ এর তথ্যমতে ‘চামড়া শিল্প ’দেশের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে চতুর্থতম। অতএব আমরা মাননীয় সরকার মহোদয়কে বলবো, চামড়ার মন্দামূল্য নিরুপণে যদি ৫০০ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় ,তাহলে ন্যায্যমুল্য নির্ধারণ হলে তা আরো বেড়ে ত্রিগুণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ! যা চামড়া শিল্পটি দারিদ্র বিমোচনের জন্য মাইলফলক হবে।তাই সরকারকে বলবো, কারো ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের স্বার্থে গরীবের হক নষ্ট না করে চামড়া শিল্পকে বাঁচান,দেশ বাঁচান।


লেখক : উস্তাদ, জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা