| |
               

মূল পাতা জাতীয় অর্থনীতি বাংলাদেশ-রাশিয়ার আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন


বাংলাদেশ-রাশিয়ার আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন


রহমত ডেস্ক     23 June, 2022     09:59 PM    


চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় লেনদেন হবে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মস্কোর ভাষ্য, অর্থ স্থানান্তরে দেশটি নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। আর সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ চলছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডির বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-বিলিয়া সেন্টারে সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত চলা এক ‘বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক : বাধ্যবাধকতা, সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি’ শীর্ষক সেমিনার এসব বক্তব্য উঠে আসে। বিলিয়ার চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এম আমীরুল ইসলামের সভাতিত্বে ও বিলিয়ার পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগের মহাপরিচালক নওরীন আহসান।

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে পুরো পৃথিবী ইতোমধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকার ভারসাম্য কূটনীতি বজায় রাখার চেষ্টা করছে। কিছুদিন আগে বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র সম্মেলন করল, সেখানে কিছু দেশকে ডাকল। বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি। কথা হচ্ছে বা প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশকে চায়না-রাশিয়ার ব্র্যাকেটে আবদ্ধ করা হলো কী না। কথা হলো চলমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন কীভাবে হবে সেটি কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয় বা ট্রানজেকশন প্রক্রিয়াটা কী হবে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের অর্থ কীভাবে ট্রানজেকশন হবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়ার অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ-রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও পরীক্ষিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে রাশিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতে গেলে এনার্জির চাহিদা বাড়বে। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিল, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে যাবে। সেখানে রাশিয়া সহযোগিতা করছে, যেটার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। রাশিয়ার একটি গ্যাস কোম্পানি উৎপাদনে অবদান রাখছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, তথ্য প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং কৃষি ক্ষেত্রেও রাশিয়া অবদান রাখছে।

ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের উত্থাপিত তিন রেজুলেশনে ঢাকার ভোটের ব্যাখ্যা দিয়ে  শাব্বির আহমেদ বলেন, একটি ভোট দিয়ে অনেক কিছুর মূল্যায়ন করা যাবে না। বাংলাদেশ তিনটি ভোটের দুটিতে বিরত ছিল, আর একটিতে ইউক্রেনকে সমর্থন করল। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি স্বাধীন। দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে আমরা খুব ভেবেই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেই। আমরা নিজেদের আগ্রহের জায়গাসহ সব বিষয় বিবেচনা করে দেখি আমাদের কী করা উচিত। আর্থ সামাজিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ বেশ ভালো উন্নতি করেছে। এ সফরে আমরা আমাদের বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে রাশিয়ার সমর্থন পেয়েছি। আমরা আশা করছি, এ সহযোগিতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে রাশিয়া দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন একাতেরিনা সেমেনোভা বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। বর্তমান ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও সাপ্লাই চেইন ও অর্থ স্থানান্তরে কাজ করছে রাশিয়া। যেন এটি ভালোভাবে করা যায়, সেজন্য আমরা নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কাজ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের যে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, সেখানে অবদান আছে রাশিয়ার। আমরা রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে অবদান রাখছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা রোজানা রশিদ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব উষ্ণ ছিল। আশির দশক থেকে বাংলাদেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তবে বর্তমানে দুই দেশ আবার উষ্ণ সম্পর্ক উপভোগ করছে। ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশ নীরবে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়ে আসছে। বঙ্গোপসাগরে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশকে আকর্ষণের কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।