| |
               

মূল পাতা আরো সম্পাদকীয় আর কত মহিষের মতো শ্বেতপত্রের কাদায় দাঁড়িয়ে মুখ জাগাবেন?


আর কত মহিষের মতো শ্বেতপত্রের কাদায় দাঁড়িয়ে মুখ জাগাবেন?


মনযূরুল হক     09 June, 2022     06:15 PM    


শ্বেতপত্র প্রকাশ এবার থেকে শুরু হয় নি—গত দুই যুগে কমিশনটি অন্তত ১৩টি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। এবং আশ্চর্যের কথা হলো, সবগুলোর মূল সুর—হুজুর বিরোধিতা। কী ধৈর্য, কী অবিচলতা, কী অমানুষিক পরিশ্রম করে তারা এই কাজটি বছরকে বছর ধরে করে যাচ্ছেন। সামাজিকভাবে তারা ব্যাপক অপদস্থ হয়েছেন। চিহ্নিত গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছেন। বিরোধী মতের হুমকি পেয়েছেন, সরকারের নেগলেন্সিও সয়েছেন। তারপরও ৮০০ দিন, ১৫০০ দিন, ২০০০ দিন—এভাবে ধরে ধরে বিরাট কলেবরের একেকটি কাজ সর্বোচ্চটুকু দিয়ে করছেন। শত্রু হলেও তাদের এমন প্রচেষ্টাকে স্যালুট জানানো উচিত।

আমরা ভাবতাম, এমন একনিষ্ঠ নিবেদন একমাত্র ইমানদারের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু তারা দেখিয়েছেন অধ্যাবসায় আর সহিষ্ণুতা দিয়ে ভণ্ডামি মোনাফেকিকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। অনেকে বলছেন, আজও কেন তাদের প্রমাণ খণ্ডনের চেষ্টা কেউ করল না। কেউ কেন দেখিয়ে দিল না যে, তারা যা বলছেন, মিথ্যা বলছেন, ইত্যাদি। সেটি একটি প্রশ্ন।

কিন্তু আমি কথাটা একটু অন্যভাবে বলতে চাই। আচ্ছা, আপনাদের কি মিকদাদ ভার্সির কথা মনে আছে? (অসুবিধা নাই, কমেন্টে লিংক দিয়ে দিচ্ছি) ভুল আর অসত্য তথ্যের বিরুদ্ধে যে ছেলেটা বহু বছর ধরে লড়াই করছে। বিবিসি, সিএনএন পর্যন্ত তার কয়েক ডজন প্রতিবাদী লেখা ছেপেছে—যেখানে তাদেরই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত মুসলিমদের বিরুদ্ধে আঙুলতোলা সংবাদগুলো মিথ্যা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন তিনি। তারা ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে।

আরো পড়ুন : ‘তালেবদের বিজয়ের প্রধান কারণ তাদের পঞ্চায়েতের সমর্থন’

দেখুন, এইসব শ্বেতপত্রের তথ্য অধিকাংশ কিন্তু সংবাদমাধ্যম থেকেই নেওয়া হয়। প্রাইমারি সোর্স ব্যবহার করে শুধু রঙ চড়ানো হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ব্রিটেনে, ইউরোপে, পশ্চিমা দেশগুলোতে, যেখানকার মুসলিমদের আমরা ঊন-মুসলিম (বা মডারেট মুসলিম) ভাবি, সেখানে মিকদাদ ভার্সিরা জন্ম নেয়। অথচ, এই খাঁটি মুসলমানের দেশে এমন কোনও উদ্যোগ আমরা দেখি না।

জাতীয় দৈনিকে বা টেলিভিশনে যেসব ‘মৌলবাদী’ ট্যাগ খাওয়া হুজুররা হরহামেশা সাংবাদিকতা করেন, দুদিন পর পর নানান নামে ‘ইসলামিক জার্নালিস্ট’ গ্রুপের উৎপাদন করেন, তারা কি কখনও ভেবেছেন—তাদেরই স্বজাতির বিরুদ্ধে যেসব ভুল আর অসত্য সংবাদ প্রকাশ পায় প্রায় প্রতিদিন, সেগুলোর সত্যটা উন্মোচন করা যায় কি না? গত পঞ্চাশ বছর ধরে চলা ১০০টি মেজর নিউজ নিয়ে এমন একটা অনুসন্ধান প্রকাশ করুন—পৃথিবী কেঁপে উঠবে।

সময়ের সমস্যাগুলো সময়ের ভাষায় সমাধানের চেষ্টাটা যে ইসলামপন্থিরা বোঝেন না—এইটাই বড় দুঃখ। যখন সমস্যা আসে আইনের, দলে দলে গ্রেপ্তার হতে থাকে আমাদের বন্ধুরা, তখনও আমরা আইন শিক্ষাকে পাশ কাটাই। কত যুবক ‘জাহালম’ কিংবা ‘সালেম’ হয়ে কারাগারের অন্ধকারে পঁচে মরছে, কে তার খবর নেয়? একদল ‘প্যারালিগ্যাল’ বানিয়ে যদি প্রিজনে কয়েকটা ছেলেকে পাঠানো যেত—শুধু আইনের স্বাভাবিক অধিকারটা তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। কত এডভোকেটের দীনের বুঝ নেই, তারপরও মানুষের জন্য লড়ছেন। অথচ আমরা দীনদার... কে করবে সে কাজ?

ঢাকা মেডিকেলের জেনারেল ইউনিটগুলোতে একদিন ঘুরে আসুন, প্লিজ। মানুষের কষ্ট দেখলে মনে হবে, এখন আর গোরস্তানে গিয়ে মৃত্যু স্মরণ করার সময় নয়, এখন হাসপাতালে গিয়ে কয়েকদিন ঘুরলেই আল্লাহর সামনে সর্বাঙ্গ সমর্পণ করে দিতে ইচ্ছা হয়। আমাদের মাদরাসাগুলো থেকে যেভাবে ইজতেমায় দলবেঁধে প্যান্ডেল বানাতে যায়, তেমন কি সপ্তাহে বা মাসে বিভিন্ন স্টুডেন্ট ইউনিট মেডিকেলে একটু যেতে পারে না? সম্ভব না? বিরাট আয়োজন লাগবে? নিরক্ষর রোগীদের একটু ডাক্তার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে, চিকিৎসা কোনটা কোথায় হয়, কোথায় পরীক্ষা হয়, কিভাবে ফ্রি তারা অপরাশেন করা সুযোগ পাবে—এসব শুধু একটু বুঝিয়ে দেবে। অল্প কিছু টাকা আর দুটি হাত নিয়ে এহসান সিরাজ ভাই প্রায় প্রতিদিন যান। আমি নিজ দেখেছি, পিছন ফিরতেই ভুক্তভোগী লোকজন তার জন্য দুই হাত তুলে আল্লাহ আল্লাহ বলে দোয়া করছেন।

যে-কথা বলছিলাম, বছর তিনেক আগে একবার বারবারা ম্যাককর্মিকের (ভদ্রমহিলা গতবছর মারা গেছেন) একটা ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছিলাম হোটেল সোনারগাঁওয়ে (পরিচিত আরও অনেকেই ছিলেন)। বিষয়—ফেইক নিউজ যাচাই। তারপর বহুবার ভেবেছি, এরকম ওয়ার্কশপ কেন হয় না এই সমাজে, যেখানে মিথ্যা নিউজই সমাজকে প্রতিমুহূর্তে বিভ্রান্ত করছে, সেখানে কেন এখনও আকিদার লড়াই চলে। আর কত মহিষের মতো শ্বেতপত্রের কাদায় দাঁড়িয়ে মুখ জাগাবেন? এবার অন্তত একটু চলতি সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবুন।


লেখক : সমাজ চিন্তক ও লেখক