| |
               

মূল পাতা আরো পাঠকের কলাম ঈদে অসভ্যতা: দায় কার?


ঈদে অসভ্যতা: দায় কার?


যুবায়ের আহমাদ     06 May, 2022     07:15 PM    


এবারের ঈদে ট্রাকে ট্রাকে যুবক-কিশোরদের নাচানাচির যে অশ্লীলতা ও অসভ্যতার চর্চা হয়েছে এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সমাজপতিরা। সমাজপতিরা অনেকে বলেন, ‘ঈদে পোলাপান একটুআধটু এমন করেই’। এটা বললেন না সর্বনাশ করলেন। একথা বলাই এক অঘোষিত লাইসেন্স হয়ে যাবে। এমন বলা মানেই কিশোরদের উস্কে দেওয়া। তাদের উস্কানিই এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে সমাজপতিদের উদ্যোগে ঈদকেন্দ্রিক সামাজিক পূনর্মিলনী, জ্ঞানচর্চা ও সুস্থ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বা হালাল খেলাধুলার ব্যবস্থা করা জরুরি ছিল। গ্রামে গ্রামে সুস্থ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলে ছেলেগুলো যাবে কোথায়? তাদের ভালো কিছু  দিলে হয় তারা পাবজি খেলবে নয় ট্রাকে করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে নেচে অসভ্যতার চর্চা করবে।

সমাজপতিরা কোনো প্রতিবাদও করেনি। দেশের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে যদি রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা একটু সতর্ক ভূমিকা পালন করত, প্রশাসনকে ধরিয়ে দিত,  ওইসব ছেলেদের বাবাদের ফোন করে তাদের হাতে তুলে দিত, একদিনেই এসব বন্ধ হয়ে যেত। 

আমরা ঈদকে নামাজ পর্যন্ত ইসলামী উৎসবে সীমাবদ্ধ করেছি। নামাজ শেষ হলে বাকি কাজগুলো তা হিন্দু-খ্রিস্টানদের উৎসবের সঙ্গে মিলে যায়। কেন? এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। ঈদকেন্দ্রিক সমাজে সমাজে ঈদ পুনর্মিলনী, চাচক্র, বৈকালিক আড্ডা, সুস্থ বিনোদন বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সে অনুষ্ঠানে এলাকায় শিক্ষায় কৃতিত্বের সাক্ষর রাখা শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান, রমজানে রোজা রাখা কিশোরদের পুরস্কার প্রদান, শিশুদের কাছ থেকে হামদ-নাত শোনা, তাদের কৌতুকসহ নানা পারফরমেন্স শোনে তাদের ভালো কাজে জড়িয়ে রাখলে এ অসভ্যতার চর্চা হবে না।

দ্বিতীয়ত বেশি দায়ী সরকার ও প্রশাসন: এ  অসভ্যতা দমনে প্রশাসনের যতটা কঠোর হওয়া দরকার ছিল তাদের ততটুকু কঠোর দেখা যায়নি। তারা কেবল ‘রাস্তায় এভাবে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ’ এতটুকু বলছেন। একটি ইসলামী অনুষ্ঠানে অনৈসলামিক কর্মকান্ড যে ইসলাম ও ঈদকে অপমান করছে তা তারা বলছেন না। ঈদ তো একটি ইবাদত তাতে এহেন কাজের চর্চা হবে কেন? নামাজের দৃশ্য আর পূজার দৃশ্য যেমন এক হতে পারে না, তেমনি ঈদ ও পূজার দৃশ্যও এক হতে পারে না।

সরকারিভাবে ঈদ উদযাপনে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের স্বাধীনতার মাসে মাসজুড়ে অনুষ্ঠান থাকে, শতকোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। বিজয়ে মাসে মসজুড়ে অনুষ্ঠান থাকে, শতকোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। ঈদে কেন থাকবে না। ঈদ উপলক্ষ্যে কেন টেলিভিশনে হারাম গানের অনুষ্ঠান হবে? ঈদের পুরো আয়োজন হবে ইসলামের আদলে। সরকারিভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রত্যেকটি উপজেলা ও ইউনিয়নে হালাল বিনোদন ও ঈদ উদযাপনের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে পরবর্তীতে তাদের ডাবল ছুটি দিয়ে স্থানীয় আলেম ও মুরব্বিদের নিয়ে প্রতি উপজেলা ও ইউনিয়নে আকর্ষণীয় শরিয়াহ সমর্থিত ঈদ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করলে অশ্লীলতা কমবে ইনশাআল্লাহ!

তৃতীয়ত আমাদের ইমামদের আরো সতর্ক ভূমিকা পালন প্রয়োজন। প্রতিটি ঈদগাহ ও মসজিদের ঈদের সালাতের আগে/পরে খুতবা ও বয়ানে এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য হওয়া চাই। যুবকদের এসবের বিরুদ্ধে শপথ করানো চাই!

লেখক: কলামিস্ট ও ইসলামী আলোচক।