| |
               

মূল পাতা সম্পাদকীয় করোনা ভাইরাস শিক্ষাবিরোধী একটি পুঁজিবাদি আগ্রাসন


করোনা ভাইরাস শিক্ষাবিরোধী একটি পুঁজিবাদি আগ্রাসন


সৈয়দ শামছুল হুদা     22 January, 2022     07:37 AM    



করোনা ভাইরাস অর্থনীতির চাকার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। কিছু লোককে ফকির বানিয়ে কিছু মানুষকে কোটিপতি বানানোর মেশিনে পরিণত হয়েছে এই করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশের এক অর্থনৈতিক জরিপে প্রমাণ করা হয়েছে যে, দেশে করোনাকালে কোটিপতির সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। করোনা ভাইরাস লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথের ফকির বানিয়ে কিছু লোকের হাতে অবাধে পয়সা তুলে দিচ্ছে। অপরদিকে শিক্ষাবিরোধি আগ্রাসী শক্তি হিসেবে ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাস সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেছে। 

আমার এক ভাতিজা বলছে, আঙ্কেল ২০২০সালে চুয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম। সেই যে ১ম বর্ষে ভর্তি হলাম, ২২সালে এসে ৩বছর পরও সেই প্রথম বর্ষেই আছি। করোনা ভাইরাস অটো পাশের মতো জঘন্য পদ্ধতির আবিস্কার করেছে। দেশে সবচেয়ে বেশি গ্যাদারিং হয় গার্মেন্টসে। অথচ করোনা ভাইরাস সেখানে কোনভাবেই ঢুকে না। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী যারা সবচেয়ে বেশি সচেতন, সেই শ্রেণিটাকেই সবার আগে আক্রমন করে করোনা ভাইরাস। অমিক্রনের এই ঢেউ শুরু হতে না হতেই বুয়েটের ফিজিক্যাল ক্লাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু হবে অনলাইনে। 

এসাইনমেন্ট নামক তামাশা
একদিকে ক্লাশ নেই, অপরদিকে মানহীন শিক্ষা।  গত ১০/১২বছরে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার মান ধ্বসিয়ে দেওয়ার মুল কারিগর ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি খুব সুকৌশলে ছাত্রদের যেন-তেন প্রকারে পাশ করিয়ে দেওয়ার নোংরা সংস্কৃতিটা চালু করে দিয়ে যান। খাতায় যাই লেখা থাকুক না কেন ছাত্র-ছাত্রীদের ফেল করানো যাবে  না এটাই ছিল নুরুল ইসলাম নাহিদের মুলতত্ব্। আর বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী চালু করেছেন অনলাইন ক্লাশ আর এসাইনমেন্ট নির্ভর শিক্ষা। এসব এসাইনমেন্ট দোকানে দোকানে বিক্রি হয়। রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায়। একজন বই দেখে দেখে এসাইনমেন্ট তৈরি করে, বাকী ছাত্ররা সেটা ফটোকপির দোকান থেকে নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসে। এভাবে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী হাসতে হাসতে শিক্ষার্থীদের হাতে মুর্খতার চাবি ধরিয়ে দিচ্ছেন। 

ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া করতে চায়। প্রশাসন পুলিশ দিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। কী নির্লজ্জ অবস্থা। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল থেকে শুরু করে সর্বত্র লেখাপড়ার চরম ধ্বস নেমে এসেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা চরমভাবে হতাশ। অভিভাবকদের মাথায় হাত। এক ইয়ারের অনার্স পরীক্ষা তিন বছরেও শেষ হচ্ছে না। শিশু-কিশোররা বিপথগামি হয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে কিশোরগ্যাং ছড়িয়ে পড়েছে। মা-বাবা সন্তানদের নিয়ে প্রতিটি মুহুর্তে রয়েছেন পেরেশানিতে। সরকারের এসব বিষয়ে কোনো দায় আছে বলে মনে হচ্ছে না। বিশেষকরে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মনে হয় তিনি দেশের শিক্ষার ১২টা বাজানোর মিশন নিয়েই করোনা ভাইরাসকে ব্যবহার করছেন। 

জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, পুলিশ দিয়ে তালা মেরে দেওয়া  এতটা কীসের মায়ার জন্য বুঝে আসে না। অথচ তারা কিন্তু জনসমাগমের বড় উ’ৎস গার্মেন্টস এ যাচ্ছেন না। সেখানে লাখ লাখ নারী, পুরুষ একসাথে অবস্থান করছে। প্রবেশ পথে ও নির্গমন পথে হচ্ছে মহাগ্যাদারিং। কোন তোয়াক্কা নেই। ব্যবসা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান সবকিছুই চালু্। বন্ধু শুধু শিক্ষা। তার মানেই হলো করোনা ভাইরাস শিক্ষাবিরোধী একটি আগ্রাসনের প্রতীক। এটা স্বৈরাচারি শাসকদের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ হয়ে দেখা দিচ্ছে। 

স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে ঠিকই সেশন ফি আদায় করে নিচ্ছে। পরীক্ষার ফি, বেতন সব আদায় করছে। নেই শুধূ মানসম্মত লেখাপড়া। যেই দেশে বিশ্বের সর্বনিম্ন গতির সাইবার কাজ করে, সেই দেশে অনলাইন ক্লাশ আরো বড় একটি তামাশা।সুতরাং, সকলে সোচ্চার হোন। আপন সন্তানদের ভবিষ্যত গড়তে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে সোচ্চার হোন। প্রয়োজনে ছাত্রদেরকে শতভাগ মাস্ক ব্যবহারের আইন করুন। তাদেরকে শতভাগ টীকার আওতায় আনুন। কিন্তু কোনভাবেই আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করবেন না। দয়াকরে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে হত্যা করবেন না। 

একটি মেধাবী ছেলে একবার শিক্ষাবিমুখ হয়ে গেলে তারে আর পুর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। সারাদেশে শিক্ষাবিনাশী যে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তা রুঁখে দাঁড়ান। সকল প্রকার পরীক্ষা যথাযথ নিয়মে গ্রহন করতে সরকারকে বাধ্য করতে সোচ্চার হোন। শিক্ষা সবার আগে। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। এটাকে ভেঙ্গে দিলে শুধূ অর্থনীতির চাকা দীর্ঘসময় সচল রাখা যাবে না। 

লেখক, জেনারেল সেক্রেটারী, বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট বিআইএম