| |
               

মূল পাতা ফিচার ভালো নেই শ্রীনগরের তাঁত শিল্প


ভালো নেই শ্রীনগরের তাঁত শিল্প


শ্রীনগর (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি     03 January, 2021     11:23 AM    


ভালো নেই তাঁত শিল্প। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যিক এ নিদর্শন। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে প্রায় ২শ’ বছরের পুরনো পূর্বপুরুষের তাঁতযন্ত্র এখনও ধরে রেখেছেন মো. জুয়েল বেপারি। মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের জনপথের ঐতিহ্যবাহী এসব তাঁতিগোষ্ঠী প্রায় বিলুপ্তির পথে। নানা প্রতিকূলতা ও করোনাকালীন সময়েও এই পেশায় দিন-রাত পরিশ্রম করে জীবিকার টানে এখনও টিকে আছে তারা।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে প্রায় ২শ’ বছরের পুরনো পূর্বপুরুষের তাঁতযন্ত্র এখনও ধরে রেখেছেন মো. জুয়েল বেপারি। মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের জনপথের ঐতিহ্যবাহী এসব তাঁতিগোষ্ঠী প্রায় বিলুপ্তির পথে। নানা প্রতিকূলতা ও করোনাকালীন সময়েও এই পেশায় দিন-রাত পরিশ্রম করে জীবিকার টানে এখনও টিকে আছে তারা।

উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের পূর্ব বাড়ৈখালী ও শ্রীধরপুর এলাকায় মো. জুয়েল বেপারিসহ আব্দুল সালাম, মো. মজিদ, মো. রমজান, মো. বাদল মিয়া, মো. নূর জামান, পলাশ, নূর হোসেন, পলাশ নামে বেশ কয়েকজন তাঁত নামক কুটির শিল্পটি এখনও ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তারা তৈরি করছেন তাঁতের ভালোমানের লুঙ্গি, গামছা ও শাড়ি কাপড়। তবে এখানে বেশির ভাগ তাঁতেই তৈরি করা হচ্ছে লুঙ্গি। এসব লুঙ্গি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাট বাজার ও নামি-দামি শপিং মলে। আধুনিক যুগে ঐতিহ্যবাহী এসব তাঁতের লুঙ্গির কদর থাকায় প্রতিটি লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১২০০ টাকায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, পূর্ব বাড়ৈখালীর ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জুয়েল বেপারির বাড়িতে টুং-টাং শব্দ হচ্ছে। লক্ষ্য করা যায়, ছোট একটি ঘরে বসে ঐতিহ্যবাহী তাঁতে বুনা হচ্ছে কাপড়। নিপুন হাতের ছোঁয়ায় মনোযোগ সহকারে কাজ করছেন তিনি। তাঁতের পাশেই চরকা-চরকিতে প্যাঁচানো হচ্ছে বিভিন্ন রঙের সুতা।

মো. জুয়েল বেপারির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পারিবারিক সূত্রে দাদার পরে বাবা, এখন তিনি এই তাঁত দিয়েই কাজ করে আসছেন। তিনি দাবি করে বলেন, বাঁশ ও কাঠের তৈরি তাঁত নামক যন্ত্রটির বয়স প্রায় ২শ’ বছর। একাজ করেই সংসার চলে তার। তার তাঁতে শুধু লুঙ্গি তৈরি করা হচ্ছে। এসব লুঙ্গি সবই বিক্রি করেন ঢাকার চকবাজার সুলতান ম্যানসনের ‘বদর ব্রাদার্স অ্যান্ড কোং’ নামক লুঙ্গি বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠানে। বদর ব্রাদার্সের তারা মার্কার প্রতিটি লুঙ্গি বিক্রি করেন ১২০০-১২৫০ টাকায়। প্রতিমাসে বদরকে শতাধিক লুঙ্গি দিতে পারেন তিনি। এ ছাড়াও এখানকার অন্যান্য তাঁতি পরিবারগুলো মানিকগঞ্জ, সাভার, মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে পাইকারিভাবে এসব তাঁতের লুঙ্গি ও শাড়ি দিয়ে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় বাড়ৈখালী এলাকায় প্রায় ঘরেই তাঁত ছিল। কালের বিবর্তনে এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে। এখনও পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া তাঁতশিল্প ধরে রাখার চেষ্টা করছে পরিবারগুলো। একটি তাতে একটানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে পারলে (এক থান) ৫ পিস লুঙ্গি তৈরি করা সম্ভব। এখানকার কিছু তাঁতি পরিবারকে কাপড় বুনার কাজে পাইকাররা সুতা, রঙসহ প্রয়োজনীয় সবই দিয়ে থাকেন। তাঁত কারিগররা শুধু কাপড় বুনার মজুরি পায়। আর যারা নিজেরাই পুঁজি খাটিয়ে এসব কাপড় বুনছেন তারা বেশি লাভবান হচ্ছেন। এখানে ৮০-৮০ ভালোমানের দেশি সুতার ব্যবহার বেশি করা হচ্ছে। তাঁতি পরিবারগুলো জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের একটু সুদৃষ্টি থাকলে তাঁত শিল্পটি টিকে থাকতে পারে। তা না হলে এক সময় একেবারেই বিলুপ্তির পথে যাবে তাঁতশিল্পটি।

-জেড